চার শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীকে অবৈধভাবে নিয়োগ

ঢাকার মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে কর্মরত ৪ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ অবৈধ।

পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর (ডিআইএ) ২০২২ সালের এপ্রিল ও জুন মাসে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা করে এই তথ্য পেয়েছে।

এই অবৈধ নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের মধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ সরকারি কোষাগারে এবং নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের গ্রহণ করা বেতনভাতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফান্ডে ফেরত নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

গত ১৬ অক্টোবর পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে ডিআইএ।

যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার, শিক্ষা পরিদর্শক মুকিব মিয়া, সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মনিরুজ্জামান, সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক সাদিয়া সুলতানা এবং অডিট অফিসার চন্দন কুমার দেব প্রতিবেদন তৈরি করেন।

এ বিষয়ে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার বলেন, গত ১৬ অক্টোবর প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। অবৈধ নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে যারা এমপিওভুক্ত তাদের নেয়া বেতন-ভাতার সরকারি অংশ সরকারি কোষাগারে এবং যেসব শিক্ষক-কর্মচারী নন-এমপিও তাদের নেয়া বেতন-ভাতার সমুদয় অর্থ উত্তোলন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ফান্ডে জমা করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। অবৈধ নিয়োগ পাওয়া জাল সনদ নিবন্ধন না থাকা শিক্ষকরা আত্মপক্ষ সমর্থনে মন্ত্রণালয়ে শুনানি চাইতে পারেন। এরপর মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেবে।

প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের পরিদর্শন প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে বলে শুনেছি। তবে প্রতিবেদন এখনো হাতে পাইনি। তাতে পেলে প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কয়েক দফায় নিয়োগ দেয়া হয় এসব শিক্ষক-কর্মচারীদের। এর মধ্যে ২০১১ সালে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৯৯ জন, ২০১৩ সালে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ১৪৮ জন। গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতির সময় ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বিভিন্ন ব্রাঞ্চে নিয়োগ দেয়া হয় ৮৯ জন। এছাড়া ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বনশ্রীতে ৬৯ জন এবং ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২১ সালে মুগদা শাখায় ৩৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছে।

নিয়োগে অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালের ১৫ মার্চ থেকে ১৪ মে পর্যন্ত ১১১ জন শিক্ষক ও একজন ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে অনিয়মের মাধ্যমে। এসব শিক্ষকদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৯৯ জন। বিভিন্ন ব্রাঞ্চে অস্থায়ীভিত্তিতে ৫৯ জন এবং ৪ জন ল্যাব সহকারী পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির বাইরে অতিরিক্ত ৪২ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। অস্থায়ীভিত্তিতে নিয়োগ পেয়ে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। অস্থায়ীভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দেয়া হয় জাতীয় বেতন স্কেলে। প্রতিবেদনে ২০১১ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৯৯ জন শিক্ষককে দেয়া বেতন-ভাতা ফেরত নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

২০১৩ সালের ১৪২ জন শিক্ষক ও ৩ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়, রেজুলেশনে ৯৪ জন শিক্ষক নিয়োগের কথা থাকলেও নিয়োগ দেয়া হয় ১৪২ জন ও তিন জন কর্মচারীসহ মোট ১৪৫ জনকে নিয়োগ করা হয়। অর্থাৎ অতিরিক্ত নিয়োগ দেয়া হয় ৫১ জন শিক্ষক-কর্মচারী।

বিধি মোতাবেক পদের নাম ও সংখ্যা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার কথা কিন্তু তা করা হয়নি বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। এতে আরো বলা হয়, আর কর্মচারী নিয়োগে গভর্নিং বডির কোনো সিদ্ধান্তই ছিলো না। ডিজির প্রতিনিধি মনোনয়নে কোনো পত্র জারি করা হয়নি। নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ২০১৩ সালের ২৩ মার্চ। ফলাফল শিটে প্রার্থীদের নিবন্ধন ও ইনডেক্স নম্বর লেখা নেই। ফলে সকল প্রার্থীর নিবন্ধন ও ইনডেক্স ছিলো কিনা তা জানা যায়নি। বিধি অনুযায়ী ১৪৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ বৈধ না হওয়ায় বেতন-ভাতা ফেরত নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতির সময় ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ৮৯ জন শিক্ষককে বিধিবহির্ভূতভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক সরবরাহ করা শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়োগ রেকর্ড যাচাই কারে দেখা যায়, শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বরের মন্ত্রণালয়েরে পরিপত্র মানা হয়নি। যা অবৈধ নিয়োগ বলে বিবেচিত হবে। এসব শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত নন, তবে প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের বেতন ভাতা দেয়া হয়েছে। এসব শিক্ষক কর্মচারীদের অর্থ প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে ফেরত নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

২০১৮ ও ২০১৯ সালে বনশ্রীতে ৬৯ জন এবং ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২১ সালে মুগদা শাখায় ৩৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র না মেনে এসব শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া হয়। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেয়া বেতন-ভাতা ফেরত নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

স্বাআলো/এসএ

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

৩ দিনের আবহাওয়া পূর্বাভাসে যা জানাল অধিদফতর

ঢাকা অফিস: আগামী তিন দিনে দেশের সব বিভাগে বৃষ্টির...

হজের ফ্লাইট শুরু ৯ মে 

ঢাকা আফিস:  চলতি মৌসুমের পবিত্র হজের প্রথম ফ্লাইট শুরু...

উপজেলা নির্বাচন: প্রথম ধাপে ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

ঢাকা অফিস: প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট বুধবার...

দেশে বেকারের সংখ্যা ২৫ লাখ ৯০ হাজার

ঢাকা অফিস: দেশে এখন ২৫ লাখ ৯০ হাজার বেকার...