সরকারি হাসপাতালে ওষুধ পান না ৬৯ শতাংশ রোগী

ঢাকা অফিস: অর্ধশতাধিক নীতিমালা ও আইন থাকার পরেও এখনো পর্যন্ত দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত হয়নি। শুধু তাই নয়, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ পান না ৬৯ শতাংশের বেশি রোগী।

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ৬৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ রোগীকেই বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়। জন্মের পরপরই মায়ের দুধ থেকে বঞ্চিত হয় দেশের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্ল্যানিং মনিটরিং অ্যান্ড রিসার্চ (পিএমআর) আয়োজিত এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনটি সেশনে প্রকাশ করা হয় বিষয়ভিত্তিক ১৪টি গবেষণা প্রতিবেদন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশ্নপত্রের ভিত্তিতে এই গবেষণাগুলো করা হয়।

অধিদফতরের নিরাপদ খাদ্য ও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণায় দেখা গেছে, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে দেশে আইন, নীতিমালা ও বিধিমালা রয়েছে ১৫২টির মতো। আইনের অভাব না থাকলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন খুব একটা নেই। যে কারণে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

দেশের হাসপাতালগুলোয় সংক্রমণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণের (আইপিসি) অবস্থা বিষয়ক এক গবেষণায় বলা হয়, বেশিরভাগ হাসপাতালে আইপিসি কমিটি আছে। কিন্তু অধিকাংশ কমিটি কার্যকর নয়। অধিকাংশ হাসপাতালেই নেই আইপিসির জন্য নির্দিষ্ট জনবল। সরকারি ৬০ শতাংশ হাসপাতালে আইপিসি ব্যবস্থাপনা নেই। আর বেসরকারি হাসপাতালের ৫০ শতাংশে নেই এই ব্যবস্থাপনা। ফলে হাসপাতাল থেকে যেসব রোগের সংক্রমণ হয়, সেগুলো বাড়বে। এই সংক্রমণ মারাত্মক ও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়।

এই গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টিবায়োটিক কীভাবে ব্যবহার করা হবে, এর একটি গাইডলাইন থাকলেও হাসপাতালগুলোয় তা মানা হয় না। এক-চতুর্থাংশ হাসপাতালে ‘হ্যান্ড হাইজেনিং স্টেশন’ অর্থাৎ হাত ধোয়ার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা নেই। প্রতি বেডে একজন রোগী থাকার কথা থাকলেও হাসপাতালগুলোয় বেডের চেয়ে বহুগুণ বেশি রোগী থাকছে। উন্নত দেশে আইপিসি হার ৩ থেকে ৫ শতাংশ হলেও এশিয়ার দেশগুলোয় এই হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।

তথ্যের ঘাটতি-সম্পর্কিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে স্বাস্থ্য খাতের যে ৪০টি সূচক রয়েছে, এসব ক্ষেত্রে সরকার কাজ করলেও পরিপূর্ণ তথ্য নেই। এ ৪০টি সূচকের মধ্যে চারটির কোনো সঠিক তথ্যই নেই। অন্যদিকে, ১০ সূচকের আংশিক তথ্য রয়েছে। আর বাকি ২৬টি সূচকের যাচাই করার মতো তথ্য আছে, তবে তা পরিপূর্ণ নয়। যে চারটি সূচকের কোনো তথ্য নেই, তা হলো জন্মহার, অনিরাপদ পানি ও অনিরাপদ স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধির অভাবে মৃত্যুহার, স্বাস্থ্য সুযোগ-সুবিধার অনুপাত (যেখানে সাশ্রয়ী মূল্যের প্রাসঙ্গিক প্রয়োজনীয় ওষুধের সুবিধা রয়েছে) এবং নির্বাচিত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার কারণে রক্তপ্রবাহের সংক্রমণের তথ্য।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রি জে কাজী রাশিদ উন নবীসহ ১৩ জন চিকিৎসক একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। সেখানে দেশের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে নেয়া রোগীদের সুস্পষ্ট মতামত উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ৬৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ রোগীকে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে খেতে হয়। যদিও তাদের হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়ার কথা। এছাড়া ১৮ শতাংশ রোগীকে সরকারি হাসপাতালের সেবা পাওয়ার জন্য টাকা দিতে হয়। হাসপাতালে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে অসন্তুষ্ট ৭৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ রোগী।

স্বাআলো/এস

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

বাগেরহাটে পরিবহনের ধাক্কায় প্রান গেলো ইজিবাইক যাত্রীর

আজাদুল হক, বাগেরহাট: জেলার পিরোজপুর সড়কের কচুয়া উপজেলার সাইনবোর্ড...

যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহবান প্রধানমন্ত্রীর

ঢাকা অফিস: থাইল্যান্ড সফরে সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার...

দুপুরে দেশে আসছে নিহত ৮ বাংলাদেশির লাশ

ঢাকা অফিস: ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টাকালে তিউনিসিয়া...

থাইল্যান্ড সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

ঢাকা অফিস: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার (২ মে)...