২১ ফেব্রুয়ারি ছাড়া খোঁজ নেয় না কেউ এই ভাষা সৈনিকের

হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট: ভাষা আন্দোলনে লালমনিরহাটের যেসব ভাষা সৈনিক সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের মধ্যে আবদুল কাদের বেঁচে আছেন।

তার বাড়ি সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের হাঁড়িভাঙ্গা (হলদিটারি) গ্রামে।

এই ভাষাসৈনিকের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, বয়সের ভারে নুয়ে পড়া আবদুল কাদেরের শরীরের অবস্থা ভালো নেই। এ সময় ভাষাসৈনিক আবদুল কাদের অভিযোগ করে বলেন, প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলেই ডাক পড়ে। জেলা প্রশাসন রুটিন মাফিক একটি আমন্ত্রণপত্র প্রেরণ করে ডেকে নিয়ে সংবর্ধনা দেয়। কিন্তু বছরের বাকি ১১ মাস কেউ খোঁজ রাখে না।

আবদুল কাদের জানান, ১৯৫২ সালে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ভাষা আন্দোলনের জন্য ভাষাসংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি হরতালের সমর্থনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বাড়িতে চলে যায়। তখন পুলিশের খাতায় পাকিস্তানবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হন ভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা।

আবদুল কাদের ১৯৫২ সালে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। সে সময় ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন তারা। তিনি লালমনিরহাটে গঠিত ভাষা সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক ছিলেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি হরতালের সমর্থনে আবদুল কাদেরসহ ভাষাসংগ্রাম পরিষদের কয়েকজন সদস্য লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ তাদের গ্রেফতারের জন্য বিদ্যালয়ে চলে আসে।

পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে কৌশলে ছাত্রনেতারা বিদ্যালয়ের জানালা দিয়ে পালিয়ে যান। পরে তারা চিহ্নিত হলে পুলিশ তাদের ধরে এনে থানায় আটকে রাখে। কিন্তু তারা তখন থানা হাজত থেকেই ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দেয়া শুরু করেন। একপর্যায়ে তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দুই বাংলার ভাষা প্রেমীদের মিলন মেলা

আবদুল কাদের ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। বর্তমানে তিনি লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের হাড়ীভাঙ্গা (হলদিটারি) গ্রামে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন-সংগ্রামে সারা দেশের মতো সক্রিয় ভূমিকায় ছিলেন লালমনিরহাটের ছাত্রসমাজ ও রাজনৈতিক নেতারা। তারা ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে মাতৃভাষার দাবিতে আন্দোলন করেছেন। জেলায় জীবিত ও মৃত নারী-পুরুষ মিলে ১২ জন ভাষা সৈনিক ছিলেন। এদের মধ্যে ১১ জন মারা গেছেন। তারা হলেন- আশরাফ আলী, ড. শাফিয়া খাতুন, মনিরুজ্জামান, আবদুল কুদ্দুস, কমরেড শামসুল হক, মহেন্দ্র নাথ রায়, আবিদ আলী, জরিনা বেগম, জাহানারা বেগম (দুলু), কমরেড সিরাজুল ইসলাম ও জহির উদ্দিন।

স্বাআলো/এস

Share post:

সাবস্ক্রাইব

spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

সর্বাধিক পঠিত

আপনার জন্য প্রস্তাবিত
Related

কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চাচা-ভাতিজার জমজমাট লড়াই

হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট: সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে এবং মন্ত্রীর...

কালীগঞ্জে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কাজ বন্ধ, বিক্ষোভ

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট: জেলার কালীগঞ্জে আকিজ বিড়ি কোম্পানি হাজরানিয়া...

আইটিএফ চ্যাম্পিয়নশিপে লালমনিরহাটের সান্ত্বনার স্বর্ণ পদক জয়

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট: তায়কোয়ান্দো আইটিএফ চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় লালমনিরহাটের সান্ত্বনা...

কালীগঞ্জে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হলেন লুবনা

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট: জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ...