
খুলনা ব্যুরো: খুলনায় পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মসলার দাম। নেপথ্যে রয়েছে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। তারা ঈদুল আজহা সামনে রেখে নানা অজুহাতে পেঁয়াজের পাশাপাশি মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মহানগরীর ময়লাপোতা বাজারে আসা এম রহমান নামের এক ক্রেতা বলেন, কোরবানী এলেই বাজারে পেঁয়াজসহ গরম মসলার দাম বেড়ে যায়। কোনভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
রূপসা কেসিসি সুপার মার্কেটে আসা ক্রেতা চানমারী এলাকার মহসীন হোসেন বলেন, গেল রমজান মাসে পেঁয়াজের দাম ছিলো স্বাভাবিক। অথচ হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।
বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, দফায় দফায় বেড়ে এখন দেশি বা বিদেশি পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ। আর এ বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত জেলা টাস্কফোর্স কমিটি।
খুলনা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী মহানগরীতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং ভারত থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতমাসে দর ছিল দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি ২০-২৪ টাকা এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজ কেজি প্রতি ২০-২২ টাকা। সেই হিসেবে, এ কয়েকদিনে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫-২০ টাকা বেড়েছে। আর দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়ে দ্বিগুণে পৌঁছেছে। শুধুমাত্র নগরীতেই নয়, জেলার সকল পাইকারি ও খুচরা বাজারে একই হারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
আরো পড়ুন>>>ভোলায় ট্রলার ডুবি মধ্যে ২ জনকে জীবিত ও ৬ জনের লাশ উদ্ধার
পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি মজুদ পেঁয়াজ এখন কৃষকদের ঘরে নেই। থাকলেও তা সীমিত। এ কারণে আমদানি করা পেঁয়াজের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। দেশে আমদানি হওয়া পেঁয়াজের মূল অংশ ভারত থেকে আসে। ভারতে গত এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে। এ কারণে দেশের বাজারেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
তবে কেউ কেউ বলছেন, দেশের কিছু ব্যবসায়ী ভারতের সাথে যোগাযোগ করে অল্প অল্প করে পেঁয়াজ দেশে আনছেন। ফলে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা থাকছে এবং দামও বাড়ছে।
মহানগরীর বড় বাজার যাবতীয় কাঁচা-পাকা মাল আড়তদার সমিতি খুলনার সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রব জানান, পেঁয়াজ অন্য দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানি খরচ বাড়লে দামতো বাড়বে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজার পরিস্থিতির কারণে দেশের বাজারেও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। দেশটির কোনো কোনো অঞ্চলে অতিরিক্ত বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও চলছে তীব্র খরা। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এসব অঞ্চলের রপ্তানিকারকরা চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ সরবরাহ করতে পারছেন না। এসব কারণে আমদানি কম থাকায় দেশে পেঁয়াজের দাম চাঙ্গা হতে শুরু করেছে।
খুলনা বড় বাজার সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শ্যামল হালদার জানান, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। বাজারগুলোতে সরকারের মনিটরিং জোরাল করা দরকার।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার জানান, খুলনা জেলায় যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, তা একেবারেই কম। কিন্তু চাহিদা অনেক। ফলে পেঁয়াজের জন্য আমদানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
আরো পড়ুন>>>দেশ ডিজিটালাইজড হওয়ায় দুর্নীতি কমে এসেছে: জয়
জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর খুলনা জেলার সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর আলম জানান, মশলা জাতীয় পণ্যের দাম বাড়তি। এসব পণ্য কোথাও কোনো ধরনের মজুদ বা কৃত্রিম সংকট করছে কিনা, সে সব বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণমূলক অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে পেঁয়াজের ন্যায় লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে সব ধরণের মসলা পণ্যের। মহানগরীর বড় বাজারে মসলার দোকানগুলোতে প্রতি কেজি এলাচ ২৩শ’ থেকে ২৪শ’ টাকা, লবঙ্গ ৯শ’ টাকা, দারুচিনি ৩৪০ টাকা, গোলমরিচ ৫৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ খুচরা বাজারগুলোতে প্রতিকেজি এলাচ ২৮শ’ টাকা, লবঙ্গ ১২শ’ টাকা, দারুচিনি ৪শ’ টাকা, গোলমরিচ ৮শ’ দরে বিক্রি করছে ক্ষুদে ব্যবসায়ীরা। যা প্রায় দুই সপ্তাহ আগে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি এলাচ ১৫শ’ থেকে ১৬শ’ টাকা, লবঙ্গ ৮শ’ থেকে সাড়ে ৮শ’ টাকা, দারুচিনি ৩শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
নগরীর বড় বাজারে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রিপন শেখ বলেন, সামনে যেহেতু ঈদুল আজহা। এ কারণে মসলার দাম বেড়েছে।
আরো পড়ুন>>>পাবজি খেলতে না দেয়ায় কিশোরের আত্মহত্যা
বড় বাজার এলাকার মেসার্স আলতাফ ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আলতাফ বলেন, পাইকারী বাজারে সব ধরনের মসলার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এলাচের দাম কেজিপ্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪শ’ টাকা।
স্বাআলো/এসই
.
Admin
