
আবুল কালাম আজাদ, যশোর : সরকারিভাবে গত ২৫ এপ্রিল থেকে বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও ধীরগতিতে এগুচ্ছে যশোর খাদ্য বিভাগ।
জেলায় বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার ৭১২ মেট্রিক টন থাকলেও গত দুই মাসে তারা ধান ক্রয় করেছে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৮ শতাংশ। অর্থাৎ ৮২ শতাংশ ধান এখনো কিনতে পারেনি।
জেলায় বোরো মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৭২৮ মেট্রিক টন ধান। কৃষকদের দাবি যেভাবে ধান কেনা হচ্ছে তাতে তাদের কোন উপকার হচ্ছে না। অবশ্য খাদ্য বিভাগের দাবি তালিকা সংগ্রহে সমস্যা, কৃষকদের ব্যাংক একাউন্ট ও গুদামে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ধান কেনার কার্যক্রম গতি পাচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকারের উদ্যোগ সফলে গৃহিত প্রক্রিয়ার পরিবর্তন ও খাদ্য মজুদের স্থান বৃদ্ধির দাবি কৃষকদের।
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা বাজারে সপ্তাহে দুইদিন বসে ধানের সবচেয়ে বড় হাট। হাটের পাশেই সরকারি খাদ্যগুদাম। এখানেই সরকারিভাবে এক হাজার ৪০ টাকা দরে সংগ্রহের কথা বোরো ধান। হাটে ধান বেচা-কেনা হলেও কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার কোন তোড়জোড় নেই গুদামটিতে। অথচ এ গুদামে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এক হাজার ২৯৮ মেট্রিক টন। গত দুই মাসে যার মধ্যে ক্রয় করা হয়েছে ১০৪ মেট্রিক টন। কৃষকদের কাছ থেকে শতাংশের হিসেবে যা মাত্র ৮ শতাংশ ধান সংগ্রহ করেছে। কৃষকদের দাবি হাটের কাছে সরকারি গুদাম হলেও তারা ধান বিক্রি করতে পারছেন না। আর যে প্রক্রিয়ায় ধান কেনা হচ্ছে তাতে ধান বিক্রি করতে পারলেও তাদের কোন উপকার হচ্ছে না। তবে কৃষকের ঘরে এখনও ধান আছে ফলে সরকার একটু সদয় হলে তারা রক্ষা পাবে অন্যথায় আগামীতে ধান চাষ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
বাঘারপাড়া উপজেলার খাজুরা এলাকার কৃষক মনিরুজ্জাম জানান, এবার উৎপাদিত ধানের মধ্যে তিনি সরকারি গুদামে বিক্রি করতে পেরেছেন মাত্র ২৫ মণ ধান। কিছু ধান ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায় আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেছেন। এই দামে বিক্রি করে খরচের টাকাই উঠছে না আমাদের।
একই উপজেলার নিত্যানন্দপুর এলাকার আব্দুস সবুর বলেন, লিস্টে নাম না থাকায় সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে পারছিনে। তাছাড়া সরকারি গুদামও আমার এলাকা থেকে বেশ দূরে। বহন করে নিয়ে যাওয়া আরেক ঝামেলা। সে কারণে সাতশ টাকা দরে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ঘরে এখনও প্রচুর ধান রয়েছে। সরকারি গুদাম উপজেলার এক কোনায় হওয়ায় পরিবহন খরচের কথা চিন্তা করে অনেকে সেখানে যেতে পারছেন না। ইউনিয়ন পর্যায়ে ধান সংগ্রহের ব্যবস্থা এবং নগদ মূল্যে কেনা হলে কৃষকরা লাভবান হতেন।
তারা জানান, এবার ধানের যে দাম পাওয়া গেছে, তাতে আমন ফলনে বেশ প্রভাব পড়বে। একে তো বৃষ্টি নেই, তার ওপর ধানের এই দাম। এসব কারণে কৃষকরা বেশ হতাশ।
জাতীয় কৃষক সমিতি যশোর জেলার সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, উৎপাদিত ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় বেশিরভাগ কৃষকই আমন ধান উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। অনেকে জমি বন্ধক দিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি নগদ মূল্যে ধান কিনতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে গুদাম তৈরি করে ধান সংগ্রহ করলে কৃষকরা বাঁচবেন। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের যে ভবন রয়েছে, তাতেও ধান সংগ্রহ সম্ভব। শুধু সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন। কৃষক যদি তার ধান সঠিক দামে বিক্রি করতে না পারেন, তবে সামনে ধান চাষ থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোরের উপপরিচালক এমদাদ হোসেন শেখ জানান, এ জেলায় বোরো মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৭২৮ টন ধান। সরকার যশোর জেলা থেকে প্রায় ১৩ হাজার টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে লক্ষ্যে কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা পর্যায়ে কমিটি দিয়ে অনুমতি নিয়ে কৃষকদের তালিকা সংশ্লিষ্ট খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দফতরে পাঠানো হয়েছে। প্রায় ৫ লাখ কৃষকের মধ্য থেকে তাদের নির্বাচন করা হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা লিয়াকত আলী বলেন, সরকারিভাবে গত ২৫ এপ্রিল থেকে বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে খাদ্য বিভাগ। গত দুই মাস ধরে ধান ক্রয় হয়েছে ২২২১ টনরে কিছু বেশি। তালিকা সংগ্রহে সমস্যা, কৃষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকায় ও গুদামে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ধান কেনার কার্যক্রম গতি পাচ্ছে না।
তিনি বলেন, খাদ্য গুদামে যথেষ্ট খাদ্যশস্য স্টক রয়েছে। শিগগিরই টিআর, কাবিখা, ভিজিডির মাল বেরিয়ে যাবে। আবার ধান ক্রয় শুরু করে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবো।
স্বাআলো/আরবিএ
.
Admin
