তলিয়ে গেছে রংপুরের চরাঞ্চল : শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা

রংপুর ব্যুরো : টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের ৫০টি গ্রাম হাঁটু থেকে কোমড় পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানায়, রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আজ শনিবার দুপুরের দিকে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার শংকরদহ, চরইছলী, বাগেরহাট, নোহালী, বাগডোগড়া, মহিপুর, লক্ষীটারি কাউনিয়া উপজেলার হরিশ্বর, ঢুষমারা গোপিডাঙ্গা, পাঞ্চরভাঙ্গা, আরাজি হরিশ্বর, তালুক সাহাবাজ, হয়বৎখাঁ, আজমখাঁ, বিশ্বনাথ, চরটাবু, গনাই, টাপুরচর, চরগনাই ও বিশ্বনাথ ও পীরগাছা উপজেলার রহমতেরচর, জোয়ানের চর, করাতিপাড়া, তাম্বুলপুর, চর ছাওলা, শিবদেব চর, দক্ষিণ গাবুড়ার চর, পুর্ব হাগুড়িয়া হাশিম, কান্দিনার চর, রামসিং, কামারেরহাটসহ ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে গঙ্গাচড়া উপজেলার শংকরদহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর শংকরদহ নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর ইছলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাগেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর বাগডোগড়া নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাইকান সিনিয়র মাদরাসা, পীরগাছা উপজেলার কামারেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কান্দিনার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর দক্ষিণ গাবুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর ছাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামসিং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জুয়ানের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুর্ব হাগুড়িয়া হাশিম চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রহমতের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, করাতিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাউনিয়ার ঢুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছার চরাঞ্চলের শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তা মোকলেসুর রহমান জানান, রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যদি বৃষ্টি অব্যাহত থাকে তাহলে আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে।

গঙ্গাচড়ার উপজেলার কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন রাজু জানান, তিস্তা নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। গত দুই দিনে ১০ একর জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বিভিন্ন গ্রামের শত শত পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় দুর্বিসহ দিন কাটাচ্ছে। তাদের উদ্ধার করার জন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

আরো পড়ুন>> নারী শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে রংপুরে মানববন্ধন

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাছলিমা বেগম জানান, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পূর্ব ইছলিগ্রামে তিস্তা নদীর পানির তোড়ে সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে। ফলে পূর্ব ইছলী, পশ্চিম ইছলি, শংকরদাহ এবং বাগেরহাট গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ সড়ক পথে উপজেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেতে পারছেন না। তিনি আরও জানান, গত শুক্রবার বেশকিছু গ্রামে পানিবন্দি মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

এদিকে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ মো. আব্দুল হাকিম বলেন, পানি বৃদ্ধি হওয়াতে ভাঙন আতঙ্ক বেড়েছে। আমরা প্লাবিত এলাকাগুলোর খোঁজখবর রাখছি। প্রশাসনকে ভাঙন রোধ ও সহায়তার বিষয়টি অবগত করেছি।’

অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মমতাজ উদ্দিন জানান, গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারি, নোহলী, কোলকোন্দ, আলমবিদিতর, গঙ্গাচড়া সদর এবং কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর, কাউনিয়া সদর বালাপাড়া, হারাগাছ, শহীদবাগ ও পীরগাছা উপজেলার ছাওলা এবং তাম্বুলপুর এই কয়েকটি ইউনিয়নের তিস্তা নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো তলিয়ে গেছে। এতে করে রবি শষ্যসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

স্বাআলো/এম

 

.

Author