
শাহাদৎ হোসেন মিশুক, গাইবান্ধা : গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে গাইবান্ধার নদ নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা, ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ফলে বিভিন্নস্থানে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন।
এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যার আশংকা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানি বৃদ্ধির ফলে নদী তীরবর্তী ২০টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও নিন্মাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি পুরাতন ফুলছড়িঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই সময় তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি ছিল। কিন্তু শনিবার বিকেল তিনটায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি পুরাতন ফুলছড়িঘাট পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার, তিস্তা নদীর পানি রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহরের নতুন ব্রীজ এলাকায় বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শনিবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত ২২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদে ৩৮ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীতে ৩৫ সেন্টিমিটার ও তিস্তা নদীতে ১৮ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীবেষ্টিত সুন্দরগঞ্জের তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, কাপাসিয়া, শ্রীপুর, সদর উপজেলার মোল্লারচর, কামারজানী, ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া, উদাখালী, এরেন্ডাবাড়ি, ফজলুপুর, গজারিয়া, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী, সাঘাটা, হলদিয়া, জুমারবাড়ী ইউনিয়নের চরাঞ্চলগুলোর পথ-ঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে যাতায়াতসহ পরিবারের ছোট্ট শিশুদের নিয়ে সমস্যায় পড়েছে ওই এলাকার মানুষেরা। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির আশংকায় আছে এসব এলাকার ১৬৫টি চরের প্রায় চার লাখ মানুষ।
আরো পড়ুন>> গাইবান্ধায় চেইনের নামে অতিরিক্ত চাঁদা, ৭ দিন ধরে বন্ধ প্রথম শ্রেণির বাস
অপরদিকে নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চল ও মূলভূখন্ডে দেখা দিয়েছে ভাঙন। সুন্দরগঞ্জের চন্ডিপুরের হরিপুরঘাট, কাপাসিয়ার লালচামার, শ্রীপুর ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্টে, সদরে কামারজানীর গোঘাট, রায়দাসবাড়ী, ফুলছড়ির এরেন্ডাবাড়ীর জিগাবাড়ি, হরিচন্ডি, কাবিলপুর, উড়িয়ার রতনপুর, উদাখালীর সিংড়িয়া, গজারিয়ার কাতলামারী, গলনা, ফজলুপুর ইউনিয়নের পূর্ব খাটিয়ামারী, উজালডাঙ্গা, বাজে তেলকুপি, ফুলছড়ি ইউনিয়নের দেলুয়াবাড়ী, সাঘাটার ভরতখালীর হাটভরতখালী, হলদিয়া ও জুমারবাড়ির নলছিয়া এলাকাসহ চরাঞ্চলগুলোতে দেখা দিয়েছে ব্যাপক নদীভাঙন। প্রতিদিনই নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে শতশত ঘরবাড়ি, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গাছ-পালাসহ ফসলি জমি। গত এক সপ্তাহে ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জের ভাঙন কবলিত এলাকায় শতাধিক পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। নদীভাঙনের শিকার পরিবারগুলো আশ্রয় নিচ্ছে অন্যের জায়গায়, আত্মীয়ের বাড়ি ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। ভিটেমাটি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা, ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীর পানি যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর বাঁধ হুমকির মুখে পড়বে। করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধির এই হার অব্যাহত থাকলে দুএক দিনের মধ্যে দেখা দেবে বন্যা। এসব নদ-নদীর ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোয় ভাঙনরোধে ৬৫ হাজারের বেশি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে।
স্বাআলো/এম
.
Admin
