নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে বানভাসি মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা :  পানিতে থইথই করছে উঠান, বারান্দা। এমনকি ঘরের ভেতর বুকপানি, সেখানে বইছে স্রোত। পানিতে নষ্ট হয়েছে চাল-ডাল, বিছানা-বালিশসহ নানা আসবারপত্র। নষ্ট হয়েছে পাটসহ আবাদি ফসল। বন্ধ হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো। বেকার হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।

যমুনার পানিতে তলিয়ে যাওয়া বসতঘরে পাঁচ দিন ধরে বন্দী থাকার পর ডিঙি নৌকা করে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে বানভাসি মানুষ।

হাটবাড়িচরের চারদিকে যমুনা নদী। অনেকটা দ্বীপের মতো এই চর। পূর্বে জামালপুর জেলা। উত্তরে গাইবান্ধা। বগুড়া জেলা শহর থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দুরে যমুনা নদীবেষ্টিত এই চরে বসবাস প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষের। ৪০০ পরিবারের বেশির ভাগ মানুষের জীবিকা চলে যমুনায় মাছ ধরে। অন্তত দুই বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই চরের অধিকাংশ বসতঘর এখন যমুনার পানিতে তলিয়ে গেছে বুকসমান পানির নিচে। মানুষ আশ্রয় নিয়েছে নৌকায়, টিনের চাল আর বাঁশের উঁচু মাচায়। চরের কোথাও শুকনো জায়গা নেই। নারীরা ছোট ছোট শিশুকে নিয়ে নৌকায়, মাচায় আশ্রয় নিয়েছেন। তলিয়ে গেছে নলকূপ। নদীর পানি খেয়ে তৃষ্ণা মেটাচ্ছে বানভাসিরা।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবর্ষণে যমুনা নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার ঢলে তলিয়ে গেছে অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমির পাটসহ আবাদি ফসল। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৬৮ হাজার মানুষ। আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারি হিসাবে দুর্গত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ১৭ হাজার ৫০০। পানি ঢুকে পড়ায় ৬৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

যমুনা নদীর পানি বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার মথুরাপাড়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি অবনতি ঘটেছে সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এবং দুর্গম চরে। দুর্ভোগে পড়েছে চর এলাকার হাজার হাজার মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি। তলিয়ে গেছে পাট, ধানসহ বহু ফসল। দুর্গত এলাকার লোকজন ছুটছে নিরাপদ আশ্রয়ে।

বগুড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বলেন, যমুনা নদীর সারিয়াকান্দি পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ১৬ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। গতকাল দুপুর ১২টায় পানি ছিল ১৭ দশমিক ৫৭ সেন্টিমিটার। ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে আজ দুপুর ১২টায় তা ১৮ সেন্টিমিটার অতিক্রম করেছে।

যমুনার ঢলে সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ি, হাটশেরপুর, কাজলা, কর্নিবাড়ি, বোহাইল, চন্দনবাইশা, কামালপুর ও কুতুবপুর ইউনিয়ন এবং সোনাতলা উপজেলার পাকুল্যা ও তেকানীচুকাইনগর ইউনিয়নের ১০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে পাট, আউশ ধানসহ বিস্তীর্ণ ফসলের খেত। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের চরভাঙ্গুরগাছা, চরদলিকা, চরবিরামের পাচগাছি, চরআউচারপাড়া, চরখাটিয়ামারি, সুজনেরপাড়া, বহুলাডাঙ্গা, শিমুলতাইর, ফাজিলপুর, মানিকদাইড়, হাটবাড়ি, হাটশেরপুর ইউনিয়নের চরচকনতিনাথ, দীঘাপাড়া, কাজলাচরের উত্তর ও দক্ষিণ বেণুপুর, জামথৈল, টেংরাকুড়া, পাকদহ, পাকুরিয়া, ঘাঘুয়ারচর, কর্নিবাড়ি ইউনিয়নের মূলবাড়ি, তালতলা, নান্দিনারচর ও বানিয়াপাড়াচরের বানভাসি মানুষ।

যমুনার ঢলে প্লাবিত হয়েছে সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের রোহদহ, ইছামারা, চন্দনবাইশা, নিজচন্দনবাইশা, ঘুঘুমারি, দক্ষিণ ঘুঘুমারি শেখপাড়া, ফকিরপাড়া, আকন্দপাড়া, শাকদহ, তালুকদারপাড়ার কয়েক শ বসতবাড়ি। এসব গ্রামের পানিবন্দী মানুষ মালামাল, গরু-বাছুর নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে।

বগুড়া জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা গেছে, আজ পর্যন্ত জেলার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ৯৯ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে দুর্গত এলাকার ১৭ হাজার ৫০০ পরিবারের ৬৮ হাজার ৫০০ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। বন্যায় প্রায় ৪০০ বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি যত বাড়ছে, পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ তত বাড়ছে। তলিয়ে গেছে পাট, ধানসহ বহু ফসল।

বগুড়া জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা (ডিআরআরও) আজহার আলী মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় আজ পর্যন্ত দুর্গত ব্যক্তিদের জন্য ৬০০ মেট্রিক টন চাল, ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ ১০ লাখ টাকা এবং আশ্রয়শিবিরের ৫০০টি তাঁবু বরাদ্দ মিলেছে।

স্বাআলো/এএম

.

Author