কুড়িগ্রামে ৭ লাখ মানুষ পানি বন্দি

জেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম : ৫ দিন ধরে কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী মহাসড়কে ধরলা সেতুর পুর্বপাড়ে প্লাষ্টিকের তাবু বানিয়ে বসবাস করছেন সদর উপজেলার পাঁচগাছী কদমতলা গ্রামের নাসরিন বেগম, জমিরন বেওয়া, ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চর সবুজপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম মজর আলীর পরিবারসহ শতশত পরিবারে।

ঘর-বাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় এই সড়কের পাশে দুই ধারে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। কিন্তু এই ৫ দিনে সরকারি বা বেসরকারি কোন সাহায্যই তাদের কপালে জোটেনি বলে জানান এই পরিবারগুলো।

শুধু কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী মহাসড়কে নয় এমন দৃশ্য এখন জেলার ৯ উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকাগুলোর উঁচু সড়ক ও উঁচ বাধগুলোর। যেখানেই উঁচু বাঁধ বা পাকা সড়ক রয়েছে সেখানেই প্লাষ্টিক বা কয়েকটি টিন দিয়ে ধাপড়ি ঘর করে বসবাস করছে হাজার হাজার পরিবার। আর ত্রাণের বিষয়ে একই অভিযোগ আশ্রয় নেয়া মানুষজনের।

আরো পড়ুন>>>গাইবান্ধাকে বন্যা দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি

আর যারা বন্যার পানির মধ্যেই বাড়িতে অবস্থান করছেন তারা সংসার পেতেছেন নৌকা বা ঘরের ভিতর উঁচু মাচানের উপর। বাঁধে বা পাকা সড়কে অবস্থান করা লোকজন একবেলা রান্না করে অথবা পার্শ্ববর্তী দোকান থেকে শুকনো খাবার কিনে খেতে পারলেও চরাঞ্চলের ঘর-বাড়িতে আশ্রয় নেয়া লোকজন নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন তাদের সঞ্চিত শুকনো খাবারের উপর। তারা জানেন যে বন্যার পানি বড় জোড় ৪ থেকে ৫ দিন স্থায়ী হয়। একারণে এসব পরিবার বন্যার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ৪ থেকে ৫ দিনের শুকনো খাবারই সঞ্চয় করে রাখেন।

কিন্তু এবারের বন্যা তাদের ধারনার চেয়ে দীর্ঘ মেয়াদি হওয়ায় শুকনো খাবারের সংকটে পড়েছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমর, ফুলকমরসহ ১৬টি নদ-নদী প্রবাহিত। প্রধান নদ-নদীর মধ্যে শুধু তিস্তার পানি কিছুটা হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তার অববাহিকার বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমরসহ বাকি নদ-নদীর অববাহিকার চরাঞ্চলগুলোর পানির নীচে থাকায় এসব এলাকার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। কেন না অন্যান্য নদ-নদীর পানি খুবই ধীরগতিতে কমতে শুরু করলেও ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ১০২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১২৩ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের সুত্রে জানা গেছে, জেলার ৯ উপজেলার ৫৬টি ইউনিয়নের প্রায় ২ লাখ পরিবারের সাড়ে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি জীবন-যাপন করছে।

এ অবস্থায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় বন্যা দুর্গত মানুষেরা শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে খেয়ে না খেয়ে অবর্ণনীয় কষ্টে দিন পার করছে। গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দেয়ায় নিজেদের খাদ্যের পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্য নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বানভাসি মানুষজন।

এসব পানিবন্দি মানুষের জন্য এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫০০ মেট্রিক টন টাল ও ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ৪শ ৫০টি তাবু বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

বন্যা দূর্গত মানুষের দুর্ভোগে বেসরকারি ভাবে বা ব্যক্তি উদ্যোগে সামান্য পরিসরে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়েছে।

কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান জানান, নতুন করে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে তা বন্যা কবলিত মানুষদের মাঝে দ্রুত বিতরণ করা হবে। বর্তমানে জিআর ক্যাশের টাকা দিয়ে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে শুকনো খাবার কিনে বন্যা কবলিত মানুষদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।

বন্যার পানির প্রবল চাপে জেলার রৌমারী, রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী, চিলমারী ও উলিপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধ ছিড়ে ও সড়ক-মহাসড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে তা ঢুকে পড়ছে উঁচু এলাকার গ্রামও হাটবাজারগুলোতে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ৪ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

স্বাআলো/এম

.

Author