
রংপুর ব্যুরো: হাটবাজার পানিবন্দী হওয়ার কারণে দোকানপাট বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বন্যা কবলিত গাইবান্ধা, রংপুর ও কুড়িগ্রামের বানভাসি কয়েক লাখ মানুষ। বন্যা প্লাবিত ওই অনেকেরই দিনকাটে অনাহারে অর্ধাহারে। সরকারি ভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল্য।
আসমা বেগম নামের ফুলছড়ি উপজেলার এক গৃহবধু জানান, পানিবন্দী হয়ে ঘরে থাকাতে চুলোয় রান্না করেনি। তার কোমর পানির মতো গ্রামের বেশ কিছু দোকান পানিতে ডুবে আছে। নিকটে দোকান থেকেও খাবার কিনতে না পারায় গত তিন দিন ধরে পরিবার পরিজন নিযে অনাহারে আছেন। তিনি জানান, শুধু তিনিই নন তার মতো অনেকেই রয়েছে অনাহারে-অর্ধাহারে।
লতিফ মিয়া নামের এক কৃষক বলেন, তার বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ী উদাখালী ইউনিয়নের আনন্দ বাজারে। চলতি বন্যায় পানি বৃদ্ধির কারণে অনেক ব্যবসায়ী দোকানপাট বন্ধ রেখেছে। একারণে কেউ কেউ প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে পারছেন না। ফলে রান্নাও হচ্ছে না। এতে অনেকেই ত্রাণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। যারা ত্রাণ পাচ্ছে তারা খাচ্ছে। আর যারা ত্রাণ বঞ্চিত তাদের দিন কাটছে না খেয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি টানা বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় পানি বৃদ্ধির কারণে বসতবাড়ি, ফসলী জমি, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা, মসজিদসহ সরকারী-বেসরকারী অফিসে পানি ঢুকে গেছে। এতে করে বন্যা কবলিত গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ, সাদুল্লাহপুর, কুড়িগ্রামের চিলমারী, রাজিবপুর, উলিপুর, রৌমারী, রাজারহাট, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, কচাকাটা ও রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকার বেশিরভাগ বাজারগুলোতে কম সংখ্যক দোকান খোলা থাকতে দেখা গেছে।
সুত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের পানিবন্দী এলাকাগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বন্যা কবলিত এলাকার বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। প্লাবিত নিম্নাঞ্চলের মত শহরতলীর অনেক দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিনিয়তই পানি বাড়ায় অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে উচু সড়ক ও বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। এসব মানুষের মধ্যে ছোট-বড় অনেক দোকান মালিকও রয়েছেন। তারা পানিবন্দী পরিবার পরিজন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন। তবে কিছু কিছু এলাকায় সেখানে পানি কম সেখানে দোকানপাট খোলা রয়েছে।
কুড়িগ্রামের চিলমারি উপজেলার আষ্টমীরচর গ্রামের আলমগীর হোসেন আলম জানান, বন্যার পানির কারণে গ্রামের দোকানপাট বন্ধ। কেউ যে কিছু কিনে খাবে তার উপায় নাই।
একই কথা বলেন রাজিবপুর উপজেলার বাইটকামারী গ্রামের বিপ্লব হোসেন ও রিপন ইসলাম। তারা বলেন, চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। তাছাড়া বিশুদ্ধ পানিরও অভাব রয়েছে। অনেকেই রান্না করতে না পারায় অনাহারে দিন কাটাচেচ্ছ। সেরকম ত্রাণও নেই।
সুন্দরগঞ্জের উত্তরপরাণের বানভাসি ইদ্রিস আলী বলেন, ‘কোনো ত্রাণ না পেলেও আশ্রিতদের মাঝে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী খিচুরি বিতরণ করেছেন। যদি ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খোলা রাখতো তাহলে সাধারণ মানুষকে এই দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।
সুত্রে জানা গেছে, বর্তমানে গাইবান্ধার সাত উপজেলার এক লাখ পরিবারের অন্তত সাড়ে ৪ লাখ মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। এসব মানুষের মধ্যে ১৬১টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৬১ হাজার মানুষ ঠাঁই পেয়েছে। বাকিরা নিরাপদ আশ্রয় না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলার ৫৬ ইউনিয়নের ২ লাখ পরিবারের ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫০০ মেট্রিকটন চাল, সাড়ে ১৩ লাখ টাকা ও সাড়ে ৪০০ তাবু বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন জানায়, নৌযান সংকট থাকলেও পানিবন্দী মানুষদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে। দুর্গতদের ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে। যা বিতরণ চলমান থাকবে।
স্বাআলো/আরবিএ
.
Admin
