
বিশ্বাস আমিন, যশোর : যশোরে অপচিকিৎসার অপর নাম হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে কিংস মেডিকেল হসপিটাল। সাম্প্রতিক পর পর দুটি ভুল চিকিৎসা প্রমাণ হওয়ার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। নামমাত্র তদন্ত কমিটি গঠন করে ফাইলবন্দি করে রাখার অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কিংস হাসপাতালে গত ১০ জুলাই এক প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করার সময় গর্ভের সন্তানের মাথা কেটে যায় ও ১ জুলাই পাইলস অপারেশন করতে গিয়ে এক মহিলার জরায়ু কেটে বাদ দেয়া হয়। এই দুটি ঘটনায় পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
গত ১০ জুলাই সন্ধ্যায় যশোর সদর উপজেলার পান্থাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইকরাম হোসেনের স্ত্রী নাজনীন নাহার ভর্তি হন ডা. আতিকুর রহমানের মালিকানাধীন কিংস হাসপাতালে। ভর্তির পরপরই কোন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ডা. আতিকুর রহমান নাজনীন নাহারের অপারেশন করেন। অপারেশন করার সময় গভের্র শিশুটির মাথায় অস্ত্রের পোঁচ লাগে। এতে মাথার তালুতে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। প্রসূতির স্বজনরা ভূমিষ্ঠ শিশুর মাথায় রক্ত দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠলে, ডাক্তার তাদের ধমক দিয়ে বলেন, এটা কিছু না, সামান্য ব্যাপার। নখের আঁচড়। ওই অবস্থায় দুইদিন হাসপাতালে রেখে দেন শিশুটিকে। আলাদা কোন চিকিৎসা দেয়া বা বিষেশজ্ঞ কোন ডাক্তার দেখানো হয়নি। ১১ জুলাই রাত থেকে শিশুটি নিস্তেজ হয়ে খাওয়া ছেড়ে দিলে তারা উদ্ধিগ্ন হয়ে পড়েন। তখনও কিংস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই শিশুটি চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বরং ১২ জুলাই সকালে কিংস কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে শিশুটি ও তার মাকে ডিসচার্জ করে দেবার চেষ্টা করে। শিশুটি পিতা কোন উপায়ন্তর না পেয়ে শিশুর অবস্থা অবনতি হওয়ায় তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
১ জুলাই ডাক্তার সাদিয়া শাহিন পাইলসের অপারেশন করতে গিয়ে সদর উপজেলা কাশিমপুর গ্রামের মতিয়ার রহমানের স্ত্রী সায়রা বেগমের জরায়ু কেটে বাদ দেন।
দুটি ঘটনায় পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কার্যত কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ফাইল বন্দি করে রাখা হয়েছে।
ডা. আতিকুর রহমান খানের বিরুদ্ধে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. ইমদাদুল হক রাজুকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন যশোর মেডিকেল কলেজের শিশু সার্জন আনসার উদ্দিন ও যশোর জেনারেল হাসপাতালের গাইনি কনসালটেন্ট (জুনিয়র) ডা. সঞ্চিতা অধিকারি মিষ্টি। ডা. সাদিয়া শাহিনের বিরুদ্ধে এ তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন ডেপুটি সিভিল সার্জন হারুন অর রশিদ। অন্য দুই সদস্য হলেন যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইমদাদুল হক ও গাইনী কনসালটেন্ট ডা. রেবেকা সুলতানা।
সিভিল সার্জন দিলীপ কুমার রায় বলেন, দুটি ঘটনায় পৃথক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডা. সাদিয়া শাহিনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন তার কাছে জমা দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী সাদিয়া শাহিনকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ডা. সাদিয়া শাহিনের আচরণগত ক্রটি ছিল। অপারেশনে কোন ত্রুটি ছিল না। আর ডা. আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন তার কাছে এখনো জমা পড়েনি। প্রতিবেদন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বাআলো/আরবিএ
.
Admin
