রাজধানীতে আরেক আতঙ্ক অস্ত্রধারী ‘গ্যাং কালচার’

ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীর উত্তরা এলাকা দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে অস্ত্রধারী ‘গ্যাং কালচার’। কিশোরদের একটা অংশ বিভিন্ন নামে গ্রুপ খুলে করছে অপরাধ। ‘পার্টি’ করা, হর্ন বাজিয়ে প্রচণ্ড গতিতে মোটরসাইকেল চালানো ও রাস্তায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করাসহ চাঁদাবাজির সঙ্গে এরা জড়িয়ে পড়েছে। নিজেদের মধ্যে সংঘাতে হত্যার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে তারা।

এক সপ্তাহে উত্তরার বিভিন্ন এলাকায় অভিযানে গ্যাং গ্রুপের ২৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। বাহিনীটি বলছে, এর আগেও উত্তরা ও আশপাশের এলাকায় কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলো সক্রিয় ছিল। সেসময় তাদের চিহ্নিত করা হয়।

প্রধানত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে উঠেছে এ ধরনের গ্যাং বা গ্রুপ। গ্রুপের নাম বিভিন্ন ‘হরর ফিল্ম’ ও ভিডিও গেমস থেকে নেয় তারা।

স্কুল-কলেজের কিছু ছাত্র আড্ডা দিতে দিতে গড়ে ওঠে ছোট ছোট গ্রুপ। একসঙ্গে ঘোরাঘুরি খাওয়া-দাওয়া খেলা আর আড্ডার মধ্যদিয়ে এক সময় তারা সহিংস হয়ে ওঠে। ছোটখাটো সন্ত্রাস ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ পেছনে ফেলে এই কিশোররা ড্রাগ খুন-ধর্ষণের মতো ভয়ংকর অপরাধে জড়িয়ে পড়ে এক সময়।

আরো পড়ুন>>> অধিক সন্তান জন্ম দেয়া জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েরা প্রভাবিত হয় সহজে। নতুন কিছু বুঝতে শেখার এই সময়টাতেই ‘ক্ষমতা’ বিষয়টি তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া গেলে তারা সহিংসতাকেই হাতিয়ার মনে করে। বর্তমান সময়ের কিশোররা উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট হচ্ছে এবং সেই সংস্কৃতি নিজেদের মধ্যে ধারণ করার চেষ্টা করছে।

উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী, উত্তরখান, দক্ষিণখান এলাকায় বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং গ্রুপের দৌরাত্ম্য দেখা যায়। ২০০১ সাল থেকে এই এলাকায় গ্যাং গ্রুপের কর্মকাণ্ড শুরু হয়।

বর্তমানে নিউ নাইন স্টার, ফাস্ট হিটার বস (এফএইচবি) গ্রুপ বেশি সক্রিয়। আরও আছে কাকরা, জি ইউনিট, ব্লাক রোজ, রনো, কে নাইন, ফিফটিন গ্রুপ, ডিসকো বয়েস, নাইনস্টার, নাইন এম এম বয়েজ, পোটলা বাবু, সুজন, আলতাফ, ক্যাসল বয়েজ, ভাইপার গ্রুপ। তুফান ও নাইন স্টার গ্রুপ এক সময় সক্রিয় থাকলেও র‌্যাবের অভিযানে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।

যেভাবে প্রকাশ পেল ‘গ্যাং কালচার’

গত ৯ জুলাই টঙ্গীতে নবম শ্রেণির ছাত্র শুভ আহমেদকে হত্যা করা হয়। জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয় চারজনকে। তদন্তে দেখা যায়, কিশোর গ্যাং গ্রুপের দ্বন্দ্বে শুভকে হত্যা করা হয়।

র‌্যাব-১-এর গাজীপুরের কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে স্থানীয় পাগার ফিউচার ম্যাপ স্কুলের ছাত্র শুভ আহমেদকে বুকে, পিঠে ও মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করা হয়। টঙ্গী ও পার্শ্ববর্তী উত্তরা এলাকায় উঠতি বয়সের কিশোররা এসব গ্যাং কালচারে জড়িত। তাদের মধ্যে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব লেগেই থাকত। হত্যার একদিন আগে ভিকটিমের সঙ্গে স্থানীয় নবগঠিত একটি গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের ঝগড়া ও হাতাহাতি হয়।’

১৫ জুলাই রাজধানীর তুরাগ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্যাং গ্রুপের ১১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় দুটি শর্টগান, চার রাউন্ড গুলি ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান বলেন, ‘রাজধানীর তুরাগ এলাকায় কিছুদিন ধরে কিশোর গ্যাং গ্রুপের অপরাধ কর্মকাণ্ড র‌্যাবের নজরে আসে। তারা এলাকার আধিপত্য বিস্তার, স্কুল-কলেজে র‌্যাগিং, ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত, মাদক সেবন, ছিনতাই ও উচ্চ শব্দে মোটরবাইক চালানোর সঙ্গে জড়িত।’

আরো পড়ুন>>> গণপিটুনির ভয়ে আইডি কার্ড হাতে নিয়ে ভিক্ষা!

‘তারা মেধাবী কিশোরদের চাপে ফেলে জোর করে তাদের দলে টানত। এই গ্রুপের নিজস্ব লোগো রয়েছে। যা তারা দেয়াল লিখন ও ফেসবুকে ব্যবহার করত। মূলত পশ্চিমা চলচ্চিত্র অনুসরণ করে তারা গ্যাং চালাত এবং সেসব সিনেমা বেশি দেখত।’

নাচের প্রশিক্ষণের একাডেমিক খুলে বসেছিল ড্যান্স একাডেমি। ‘ড্যান্স’-এর কথা বলে আকৃষ্ট করে গড়ে তোলা হয় ‘গ্যাং’। চলে নানা অপরাধমূলক কার্যকলাপ আর অন্য গ্যাংয়ের সঙ্গে রেষারেষি। ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরার এমনই এক গ্যাং কালচার গ্রুপের ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তারা পিএসবি নামের একটি ড্যান্স একাডেমির সদস্য।

র‌্যাব-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ‘এরা এফএইচবি গ্যাং গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। গ্রুপে সদস্য বাড়ানোর কৌশল হিসেবে পিএসবি নামের একটি ড্যান্স একাডেমি পরিচালনা করে। এই ড্যান্স একাডেমিতে কম খরচে ড্যান্স শিখানো হয়। গ্রেপ্তার বিশু নিজেকে ডান্স মাস্টার হিসেবে পরিচয় দিলেও তার ড্যান্স বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নেই।’

স্বাআলো/এসএ

.

Author