
মুক্তযুদ্ধে বিজয়ী বীরযোদ্ধা আজ জীবন যুদ্ধে পরাজিত। ঘর-বাড়িহীন ভূমিহীন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজ্জামেল হক ঠাঁই নিয়েছেন রেল লাইনের ধারের বস্তিতে। সরকার ঘোষিত মুক্তিযোদ্ধার নামে বরাদ্দকৃত বাড়ি তার ভাগ্যে জোটেনি। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরেও বাস্তুহারা মুক্তিযোদ্ধার পরিবারটির অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি।
মোজাম্মেল হক মাতা-পিতার একমাত্র সন্তান। হাতিবান্ধা স্টেশন বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে পাকিস্তানি সেনারা তাকে মুক্তিযোদ্ধা বলে মনে করে ধরে নিয়ে যায়। দিনভর চলে নির্মম নির্যাতন। নির্যাতনের ফলে ঠিকমত দাঁড়াতে পারতেন না। জীবন বাঁচাতে পাশের জঙ্গলে কাটাতেন। এক সময় তিনি ভারতে গিয়ে মক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।প্রশিক্ষণ নিয়ে ৯ মাস সম্মুখ যুদ্ধ করেন।
স্বাধীনতার পর তার বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার চিকিৎসার খরচ যোগাতে সব বিক্রি করে হয়ে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে যায়। বসত ভিটা দখলে নেয় প্রভাবশালি একটা মহল। কষ্টে পড়ে পরিবারটি। রেলওয়ের পো্ষ্যকোটায় ও মুক্তিযুদ্ধা কোটায় একটি চাকরির জন্য আবেদন করে ঘুরতে ঘুরতে কয়েক জোড়া স্যান্ডেল ক্ষয় হয়ে যায়। কিন্তু কোন কর্মসংস্থান হয়নি। পরে জীবন বাঁচাতে বড়খাতা রেলওয়ে গেটের বাজারে নৈশ্যপ্রহরীর চাকরি করতে বাধ্য হন। এই নাইট গার্ডের কাজ করে মাসে মাত্র ৩০০ টাকা আয় হতো। সব শেষ মাসিক আয় ছিল ১হাজার ২০০ টাকা। এভাবে প্রায় ৪০ বছর নৈশ্য প্রহরীর কাজ করেন তিনি। যা আয় করতেন তাতে সংসার চলতো না।
আরো পড়ুন>>>সুখের পায়রা পালন করে জাহাঙ্গীরের সংসারে এখন সুখের পরশ
এ অবস্থায় জমি কিনে বাড়ি করা ছিল তার সাধ্যের বাইরে। তাই আশ্রয় নেন রেলওয়ের জমিতে। দু’টি ঝুপড়ি তুলে বসবাস করতে থাকেন।এরই মধ্যে তাদের ঘরে আসে এক ছেলে এক মেয়ে। আর্থিক অনটনের কারণে তাদের লেখাপড়া শেখাতে পারেননি। সংসারের হাল ধরতে ছেলেটি ছোট একটি পানের দোকান দিয়েছেন।
২০০০ সালে হাতীবান্ধায় ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ৩০০ টাকা করে ভাতা দেয় সরকার। তাদের মধ্যে তিনি একজন। এই ভাতা পেয়ল জানাজানি হয় তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ফলে তাকে দিয়ে কেউ আর নৈশ্য প্রহরীর কাজ করাতে চায়না। আবার পড়েন আর্থিক কষ্টে।
বর্তমানে প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকার যে মুক্তিযোদ্ধা পান তাই দিয়ে সংসার চলছে। এই সিংহভাগ ব্যয় হয়ে যায় ওষুধ কিনতে।
সরকারের কাছে একটি বাড়ি চান এই মুক্তিযোদ্ধা। তার জমি নেই। তাই সরকার ঘোষিত মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহনির্মাণ প্রকল্পের ঘর তার কপালে জোটেনি।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামীউল আমীন জানান, বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। এই ভুমিহীন মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হককে খাসজমি বরাদ্দ দিয়ে বাড়ি দ্রুত করে দেয়ার ব্যবস্থা করতে উদ্যোগ নেবো।
স্বাআলো/আরবিএ
.
Admin
