বিভিন্ন সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধে যুক্ত সরকারি সংস্থাগুলো যত চেষ্টা করছে তার সবগুলোর প্রতি যেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে চোরাচালানীরা। মাত্র একমাসে সোয়া ৮৮ কোটি টাকার চোরাচলামকৃত পণ্য আটকের ঘটনায় এ কথা প্রমাণ করে। ডিসেম্বর মাসে বিভিন্ন সীমান্ত থেকে এই পণ্য আটক করা হয়।
জব্দকৃত পন্যের মধ্যে রয়েছে ১০ লাখ ২৬ হাজার ৬১০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৭০ হাজার ১৩ বোতল ফেনসিডিল, ২১ হাজার ৭৪৭ বোতল বিদেশি মদ, এক হাজার ৪০৮ ক্যান বিয়ার, এক হাজার ৪২৩ কেজি গাঁজা, ৬ কেজি ২ গ্রাম হেরোইন, ১১ হাজার ৯৮টি উত্তেজক ইনজেকশন, ১৮ হাজার ৪৮৫টি অ্যানেগ্রা/সেনেগ্রা ট্যাবলেট এবং ১২ লাখ ৬৯ হাজার ২৬৫টি অন্যান্য ট্যাবলেট, ১২ কেজি ৯৭৭ গ্রাম সোনা, ১৪ কেজি ৩৪৪ গ্রাম রুপা, এক হাজার ৩৩টি ইমিটেশনের গয়না, ৫৪ হাজার ৩০৪টি কসমেটিক্স সামগ্রী, পাঁচ হাজার ৯৫৪টি শাড়ি, ৬৬৩টি থ্রিপিস/শার্ট পিস, তিন হাজার ৪৬৮টি তৈরি পোশাক, ৩৪৩ মিটার থান কাপড়, পাঁচ হাজার ১৯৮ ঘণফুট কাঠ, তিন হাজার ৭৯২ কেজি চা পাতা, দুই হাজার ৬১০ কেজি কয়লা, একটি ট্রাক, ১২টি প্রাইভেটকার, ৮টি পিকআপ, ২১টি সিএনজি/ইঞ্জিন চালিত অটোরিকশা এবং ৮৮টি মোটরসাইকেল, একটি পিস্তল, ১৪টি বন্দুক এবং ৯৫৯ রাউন্ড গুলি।
এছাড়াও সীমান্তে বিজিবি’র অভিযানে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক পাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৮২ জন চোরাকারবারি এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ১৭৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক ও ৮ জন ভারতীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে। এতো গেল বিজিবি কর্তৃক আটককৃত পণ্যের হিসেব। পুলিশও চোরাচালন বন্ধে তৎপর। তাদের হাতেও প্রচুর পরিমাণ চোরাচালানকৃত পণ্য ধরা পড়ে।
চোরাচালানীদের পাচারের কৌশলও অভিনব। একবার এই সোনা বাইসাইকেলের সামনের রড কেটে তার ভেতর ঢুকিয়ে কাটা জায়গায় স্টিকার লাগিয়ে পাচার করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। সাধারণ অবস্থায় কারো মাথায় কি আসতে পারে এভাবে সোনা পাচার করা যায়। পায়ু পথে সোনা পাচারের কথা প্রায় শোনা যায়, কিন্তু এ ধরনের অভিনব কৌশলের কথা এর আগে কখনো শোনা যায়নি। বিজিবির সোর্চ চৌকস ও প্রখর দৃষ্টি সম্পন্ন বলেই এমন একটি খবর তিনি সংগ্রহ করতে পেরেছেন। এজন্য সোর্চকে ধন্যবাদ, ধন্যবাদ বিজিবিকে।
আরো পড়ুন>>>প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতা
অনেক আগের কথা। সে সময় বিভিন্ন সীমান্তে সোনা চোরাচালানীরা দুটি কৌশল অবলম্বন করতো। যার একটি হলো, ভাঙা হারিকেনের ভেতর সোনা ভরে বাজারে যাবার ভান করে পাচার করতো। বিষয়টাকে চোরাচালন প্রতিরোধে নিয়োজিতরা মনে করতো হারিকেন মেরামত করার জন্য বাজারে নেয়া হচ্ছে। আর একদল শীত মৌসুমে সকালে ও সন্ধ্যায় খেজুরে রসের ভাড়ের ভেতর সোনা ঢুকিয়ে ‘এই যে রস’ (রস ফেরিওয়ালারা এই হাক ছেড়ে খরিদ্দার ডাকে) বলতে বলতে সংশ্লিষ্টদের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাচারের রুট ধরে নিরাপদে চলে যেত। দিন বদলের সাথে সাথে সেসব কৌশলও পাল্টে গেছে। চোরাচালানীরা উদ্ভাবন করেছে নতুন কৌশল।
চোরাচালানীরা যশোর সীমান্তে এতই বেপরোয়া যে তারা জীবন বাজী রেখে এ কাজ অব্যাহত রেখেছে। এ কাজের সাথে সরাসরি অথবা সহযোগী হিসেবে জড়িত প্রশাসনের কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের সাথে যোগসাজসে শক্তিশালী চক্র অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, পরিবহন কর্মচারী, চেকপোস্টের বৈধ অবৈধ মানিচেঞ্জার, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কর্মচারী এবং একশ্রেণির পাসপোর্টযাত্রী। এত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও চোরাচালান করার মানসিকতা পাল্টাচ্ছে না এ কারণেই। যারা ধরা পড়ে তারা মূল চোরাচালানী নয়। যারা কলকাঠি নাড়ে তারা সব সময় ধরা ছোয়ার বাইরে থাকে। যে ভাবেই হোক চোরাচালান ডেডস্টপ করতে সর্বোচ্চ শক্তি, মেধা, বুদ্ধিমত্তা ব্যয় করে মুখোশধারীদের ধরতে হবে। কেননা এ বিষয়টির সাথে আমাদের জাতীয় অর্থনীতির অগ্রগতি জড়িত।
স্বাআলো/আরবিএ