‘তালগাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে’

মাগুরা সদরের বজরুর শ্রীকুন্ঠি, মালিকগ্রাম, ধরলা, শত্রুজিৎপুর, বাটাজোর, শালিখার গঙ্গারামপুর, বুনাগাতি, পুলুম, কাটিগ্রাম, বৈখালি থেকে নড়াইল রোডের পাশে অনেক স্থানেই সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য তালগাছ। যা দেখলেই মনে পড়ে যায় রবি ঠাকুরের লেখা তালগাছ শিরোনামের এই কবিতাটি ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে/সব গাছ ছাড়িয়ে/উঁকি মারে আকাশে। মনে সাধ, কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়/একেবারে উড়ে যায়; কোথা পাবে পাখা সে?’

সত্যি তাই! একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই তালগাছগুলো যেন ডানা মেলে আকাশপানে উড়ে যেতে চায়। আর সেটা কেউ না বুঝলেও ঠিকই বুঝেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকলে কি হবে! পাকা তালের পিঠার জুড়ি নেই। আর কাঁচা তালের শাঁস খেতে দারুণ সুস্বাধু। তাছাড়া তালের রস খেতেও মিষ্টি। তবে দিনকে দিন তালগাছ নিধন করাতে আগামি প্রজন্ম বি ত হচ্ছে তা থেকে অনেকাংশে।

আরো পড়ুন>>>ব্রহ্মপুত্র চরে বাদামের বাম্পার ফলন

তালের আদিবাস মধ্য আফ্রিকা। তাল গাছ পাম গোত্রের অন্যতম দীর্ঘ গাছ যা উচ্চতায় ৩০ মিটার বা ১০০ ফুট পর্যন্ত পৌছতে পারে। তালের পাতা পাখার মতো ছড়ানো তাই বোরাসাসগণের পাম গোত্রীয় গাছগুলিকে একত্রে ফ্যান-পাম বলা হয়। তাল ভারতীয় উপমহাদেশীয় অনেক অ লেরই জনপ্রিয় গাছ। কারণ এর প্রায় সব অঙ্গ থেকেই কিছু না কিছু কাজের জিনিস তৈরি হয়, কিছুই ফেলা যায় না। তাল পাতা দিয়ে ঘর ছাওয়া, হাতপাখা, তালপাতার চাটাই, মাদুর, আঁকার পট, লেখার পুঁথি, কুণ্ডলী, পুতুল ইত্যাদি বহুবিধ সামগ্রী তৈরি হয়। তালের কাণ্ড দিয়েও বাড়ি, নৌকা, হাউস বোট ইত্যাদি তৈরি হয়। তালের ফল এবং বীজ দুইই বাঙালি খাদ্য। তালের ফলের ঘন নির্যাস থেকে তাল ফুলুরি তৈরি হয়। তালের বীজও খাওয়া হয় লেপা বা ‘তালশাঁস’ নামে । তাল গাছের কাণ্ড থেকেও রস সংগ্রহ হয় এবং তা থেকে গুড়, পাটালি, মিছরি, ইত্যাদি তৈরি হয়। তালে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি, জিংক, পটাসিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়ামসহ আরো অনেক খনিজ উপাদান। এর সাথে আরো আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও এ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান।

মাগুরা বজরুর শ্রীকুন্ঠি গ্রামের তালগাছ প্রেমি আমজাদ হোসেন (৫৫), বলেন, আজ থেকে প্রায় ২০-২৫ বছর আগে এই গ্রামে বিভিন্ন মাঠের আইল ও রাস্তার পাশে দিয়ে আরো প্রচুর পরিণামে তালগাছ এবং খেজুর গাছ ছিল। কিন্তু তার চার ভাগের এক ভাগও নেই। আমি নিজেও বেশ কিছু তাল গাছ লাগিয়েছি। আর তার বেশ কয়েকটা গাছে গত বছর প্রচুর পরিমাণ তাল ধরে ছিল। তাল খাওয়ার পাশাপাশি বেশ ভালো দামেই কিছু তাল বিক্রি করেছি।

মাগুরার প্রকৃতি ও বৃক্ষ প্রেমি আবু ইমাম বাকের বলেন, আমরা প্রতিদিন যে ভাবে বৃক্ষনিধন করছি সে পরিমাণ বৃক্ষরোপণ করছি না। তাই আমাদের সবার উচিত বেশি বেশি করে গাছ লাগানো। কেননা একমাত্র গাছই পারে জলবায়ুর পরিবর্তনের হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করতে। দিনকে দিন যেভাবে তালগাছ ও খেজুরগাছ নিধন করা হচ্ছে। একদিন হয়তো এইসব গাছগুলো ইতিহাস হয়ে যাবে। আগামি প্রজন্মকে সবুজ পৃথিবী উপহার দিতে। আমাদের সবার উচিত বেশি বেশি করে বৃক্ষরোপণ করা।

স্বাআলো/আরবিএ