বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ফাইজার-বায়োএনটেক, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনার ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে বিভিন্ন দেশ। এরই মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্যাজেনেকার ভ্যাকসিনের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। এর ধারাবাহিকতায় পাঁচটি ধাপে ১৯২ দিনে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হচ্ছে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৈরিকৃত জাতীয়ভাবে করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগের খসড়া পরিকল্পনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গত সোমবার ওই খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাইয়ের পর স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয়ভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগের খসড়া পরিকল্পনার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে।
খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী তিন পর্যায়ে পাঁচটি ধাপে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ ভ্যাকসিনের আওতায় আসবে, যা মোট জনসংখ্যার হিসাবে ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার জন। ১৯২ দিনে এই জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে কম ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে। ১৮ বছরের নিচে থাকা ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠী, ৩০ থেকে ৩৫ লাখ প্রসূতি এবং বিদেশে থাকা এক কোটিসহ প্রায় ছয় কোটি মানুষ ভ্যাকসিনের আওতার বাইরে থাকবে, যা শুরু থেকে সবাইকে জানানো হয়েছে।
খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে মোট জনগোষ্ঠীর ৩ শতাংশ বা ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জনকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপে ৭ শতাংশ বা এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জন ভ্যাকসিন পাবেন।
আরো পড়ুন>>>করোনা ভ্যাকসিনে বরাদ্দ বেড়ে ৬ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা
দ্বিতীয় পর্যায়ের একটি ধাপে ১১ থেকে ২০ শতাংশ বা এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ ভ্যাকসিন পাবেন। তৃতীয় ও সর্বশেষ পর্যায়ে মোট দুটি ধাপে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২১ থেকে ৪০ শতাংশ বা ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার এবং দ্বিতীয় ধাপে ৪১ থেকে ৫০ শতাংশ বা ৬ কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে।
সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হিসেবে কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ভ্যাকসিনের আওতায় আসবেন।
দ্বিতীয় ধাপে বয়স্ক, স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে এমন বয়স্ক মানুষ, শিক্ষাকর্মী ও গণপরিবহনের কর্মীদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে।
খসড়া পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ভ্যাকসিন প্রয়োগের কর্মসূচি পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং পর্যবেক্ষণে সহায়তা ও সমন্বয়ের জন্য সরকারের সব পর্যায়ের পরিকল্পনা ও সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হবে। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর টিকাদানের জন্য জাতীয় পর্যায়ে পৃথক কমিটি গঠন করা হবে।
সরকারি ছুটির দিন ছাড়া বাকি দিনগুলোতে সকাল ৯টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত ভ্যাকসিন প্রয়োগের কর্মসূচি চলবে। সরকারি ছুটির দিনে বিশেষ পরিকল্পনার আওতায় সরকার নির্ধারিত কিছু টিকাদান (ভ্যাকসিন প্রয়োগ) কেন্দ্রে সন্ধ্যায় ভ্যাকসিন কার্যক্রম চালানো যাবে। দুইজন কর্মী ও চারজন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে মোট ছয়জন করে একেকটি দল তৈরি করা হবে, যারা মাঠ পর্যায়ের কেন্দ্রগুলোতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি পরিচালনা করবেন। প্রত্যেকটি দল প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জনকে ভ্যাকসিন দিতে পারবে বলে খসড়া পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
স্বাআলো/আরবিএ