যশোরের মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিময় মেনে অফিসে না আসার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ রয়েছে তারা কেউ সকাল নয়টায় অফিসে ঢোকেন না। নানা অজুহাত দেখিয়ে তারা দেরিতে অফিসে আসেন। অনেকে আবার অফিস ছাড়েন বিকেল পাঁচটার আগে। অফিসে এসে সেবাগ্রহীতারা তাদের না পেয়ে খোঁজ নিতে গেলে জানতে পারেন, দফতরের কাজে কর্তারা বাইরে আছেন।
৬ জানুয়ারি সরেজমিন সকাল নয়টা সাত মিনিট থেকে নয়টা ৩৮ মিনিট পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের সব দফতর ঘুরে কোন কর্মকর্তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। কোন কোন দপ্তরে অফিস খুলে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের কাজ করতে দেখা গেছে। আবার কিছু দফতরের মেইন ফটকে বা দফতর প্রধানের কক্ষের দরজায় তালা ঝুলতে দেখা গেছে। তবে এসময় বিএডিসি অফিসের সহকারী প্রকৌশলী সন্তু সাহাকে অফিসে বসে কাজ করতে দেখা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, বেশিরভাগ দফতরের কর্মকর্তারা দশটার পরে অফিসে আসেন। যদিও নীতিমালায় রয়েছে, অফিসের কর্তারা সকাল নয়টার মধ্যে অফিসে আসবেন। তারপর কাজ থাকলে বাইরে যাবেন।
সকাল নয়টা সাত মিনিটে দেখা গেছে, কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকারের কক্ষের দরজা খোলা, তিনি নেই। ৯টা আট মিনিটে দেখা গেছে, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মৌসুমী আক্তারের কক্ষের তালা খোলা দরজা বন্ধ, ভেতরে তিনি নেই। এরপর সাংবাদিক দেখে তার অফিসের পিওন তড়িঘড়ি কক্ষের দরজা খুলে ভিতরে ফ্যান ছেড়ে দেন। পুনরায় ৯টা ৩৮ মিনিটে ওই দফতরে গিয়েও মৌসুমী আক্তারের দেখা মেলেনি।
৯টা ১০ মিনিটে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা প্রকাশ চন্দ্র সরকারের দফতর খোলা থাকলেও ভেতরে তাকে পাওয়া যায়নি। বারান্দায় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দেখা গেছে। ৯টা ১৫ মিনিটে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী দফতরের সহাকারী প্রকৌশলী জয়দেব দত্রতে কক্ষের দরজায় তালা ঝুলতে দেখা গেছে। ওই সময় তালা ঝুলছিল পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন ও আনসার ভিডিপি অফিসের প্রধান ফারুক হোসেনের দফতরেও। ৯টা ১৭ মিনিটে উপজেলা হিসাব রক্ষক কর্মকর্তার দফতর খোলা থাকলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। ৯টা ২১ মিনিটে উপজেলা প্রকৌশলী সানাউল হকের কক্ষ খোলা থাকলেও তিনি অফিসে ছিলেন না। ওই সময়ে পিআইও অফিসেও কাউকে পাওয়া যায়নি। কক্ষগুলো তালাবদ্ধ ছিল। ৯টা ২৫ মিনিটে সমাজসেবা অফিসে এমএলএসএস রুমাকে ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। ৯টা ২৬ মিনিটে নির্বাচন অফিসের প্রধান ফটকে এবং ৯টা ৩৩ মিনিটে একটি বাড়ি একটি খামার ও পল্লী স য় ব্যাংকের প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখা গেছে।
৯টা ২৭ মিনিটে উপজেলা শিক্ষা অফিসের হিসাব সহকারী বিএম আজাদ হাসান ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। ৯টা ২৯ মিনিটে দেখা গেছে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে দুইজন পিওন ছাড়া কেউ আসেননি। ওইসময় পাওয়া যায়নি সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার ইব্রাহীম মিয়া, আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক সুধাংশু দাস ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মামুন হোসেন খানকেও।
অফিসপাড়া ঘুরে এসে পরে মোবাইল ফোনে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশচন্দ্র, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সহিদুর রহমান, উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মামুন হোসেন খান ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মকর্তা মাহাতাবুল আলম যশোর অফিসে আছেন অথবা যাচ্ছেন। আর উপজেলা প্রকৌশলী সানাউল হক সাইড দেখতে গেছেন এবং শিক্ষা কর্মকর্তা সেহেলী ফেরদৌস অফিসের উদ্দেশে বেরিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব কর্মকর্তাদের সবাই যশোর থেকে এসে অফিস করেন।
৯টা ৫০ মিনিটে কথা হয় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রোকনুজ্জামানের সাথে। তিনি তখনও বাসায় ছিলেন। আর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মৌসুমী আক্তার জানান, তিনি ৯টা ১০ মিনিটের পরে উপজেলা চত্বরের কোয়াটার থেকে বেরিয়েছেন। পিআইও আব্দুল্লাহ বায়েজিদ বলেন, সকাল আটটায় কর্মসূচির কাজ দেখতে রোহিতা ইউনিয়নে গিয়েছিলাম। আর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পজীক),বিআরডিবি সরদার আব্দুর সবুর দুই দিনের ছুটিতে আছেন।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, সব দফতরের কর্মকর্তাদের চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে সবাই যেন আগামীকাল থেকে নয়টার মধ্যে অফিসে হাজির হন। কেউ ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বাআলো/আরবিএ