ইতিহাস থেকে আমরা দানবীর হাজী মুহম্মদ মহসিনের কথা জেনেছি। তার সহায় সম্পদ সব কিছু মানবতার কল্যাণে দান করে যান। তাঁর দানের কোন তুলনা নেই। এ জন্য তিনি দানবীর খেতাবটি পান। এই মহান ব্যক্তির সাথে তুলনা নয়, তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে ক্ষুদ্র পরিসরে মানবতার সেবায় আত্মোৎসর্গ করেছেন এক তরুণী। তিনি মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে মৃত্যু পথযাত্রীদের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।
তিনি যশোরের মেয়ে নার্গিস পরভিন মুক্তা। তিনি কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। বড় অংকের টাকা ব্যয়ে সুস্থ হয়ে নিজেই এখন মানবতার আলো ছড়াচ্ছেন। তিনি অসহায়–দুস্থ কিডনি রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যাদের পক্ষে বড় অংকের অর্থব্যয় অসম্ভব তাদের জন্য নিজের আয়ের সিংহভাগ ব্যয় করছেন এ মানবতাময় মানুষটি।
যশোর উপশহরের শেখ নজরুল ইসলাম ও জেবুন্নেসার ছোট মেয়ে নার্গিস পারভীন মুক্তা। স্বামী রাশেদ সুলতান তপু আর নয় বছরের এক ছেলে নিয়ে ঢাকাতে বসবাস করছেন মুক্তা।
মুক্তার দুটি কিডনির ৯০ ভাগ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এক পর্যায়ে তার কিডনি পুরোপুরিই অকার্যকর হয়ে পড়ে। ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর সফল কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। সেই থেকে কিডনি রোগিদের পাশে দাঁড়ানোর চিন্তা থেকেই নতুন জীবন পেয়ে গড়ে তোলেন ফ্যাশনভিত্তিক একটি ফেসবুক পেইজ ‘‘মুক্তা’স ফ্যাশন’’।
২০১৮ সালের শেষদিকে তৈরি করা এই পেইজের বর্তমান ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখের কাছাকাছি। এই পেইজ থেকে মহিলাদের থ্রিপিস আর শাড়ি বিক্রির সিংহভাগই ব্যয় করেন দরিদ্র অসহায় কিডনি রোগীদের জন্য। নিজেরাই দরিদ্র কিডনি রোগী খুঁজে বের করেন। মিরপুরের কিডনি ফাউন্ডেশনে গিয়ে খুঁজে বের করেন প্রকৃত দরিদ্র রোগীদেরকে। কারও ডাক্তারের খরচ আবার কারও ওষুধ কিনে দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করার চেষ্টা করেন।
আরো পড়ুন>>>এ নরাধমের কি শাস্তি হবে
মুক্তা শুরু থেকেই উন্নতমানের পোশাক সরবরাহ করে খুবই অল্প সময়ে বাংলাদেশের ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা করা মহিলা উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম হয়ে ওঠেন। শুধু তাই নয় ই–কমার্স উদ্যোক্তাদের মধ্যে মুক্তাই প্রথম আফটার সেলস সার্ভিস প্রদান শুরু করেন। এর মাধ্যমে ক্রেতার ক্রয় করা পণ্যে কোন ত্রুটি পাওয়া যায়, মুক্তা তা নিজ খরচেই পরিবর্তন করে দেন। বর্তমানে মহিলাদের ফ্যাশনভিত্তিক ফেসবুক পেইজগুলোর মধ্যে মুক্তা’স ফ্যাশনের অবস্থান প্রথম দশটি পেইজের মধ্যে।
তিনি সব সময় একটি কথাই বলেন আল্লাহ যেন আমাকে সেই দিন দেন, যেদিন আমি একজন রোগীর কিডনি প্রতিস্থাপনের সমস্ত খরচ বহন করতে পারব।
মুক্তা মারা যেতে পারতেন। কিডনি রোগিদের অনেকের পরিণতি তাই হয়। এ ক্ষেত্রে আমরা বলবো তার হারানোর কিছু নেই। আর তাই তিনি যে অনুভুতিতে মানবতার সেবায় পা বাড়িয়েছেন তা আমৃত্যু অব্যাহত থাকুক এ কামনা আমরা করি। মুক্তাদের মত মহৎ প্রাণের মানুষ আছে বলেই সমাজটা টিকে আছে।
স্বাআলো/আরবিএ