চৌগাছা পৌরসভায় কে হচ্ছেন নৌকার কান্ডারী?

চৌগাছা: যশোরের চৌগাছা পৌরসভায় কে হচ্ছেন নৌকার কান্ডারী? নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেলই থাকছেন? নাকি পরিবর্তন আসছে এ নিয়ে আলোচনা এখন গোটা উপজেলাজুড়ে।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৭ জানুয়ারী মনোনয়নপত্র জমা শেষে ১৯ জানুয়ারী যাচাই-বাছাই সম্পন্নের পর ২৬ জানুয়ারী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।

এরপর আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ ধাপে দেশের অন্য ৫৬টি পৌরসভার সাথে চৌগাছা পৌরসভার ৪র্থ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে ১ম বারের মত পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডেই ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে।

মেয়র পদে স্বামী-স্ত্রীর মনোনয়নপত্র জমা

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কে হবেন এ বিষয়ে তৃণমূল থেকে প্রার্থী তালিকা নেয়ার শেষ দিন ছিল ১৩ ডিসেম্বর। কেন্দ্রীয় নিদের্শনা মোতাবেক প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য গত ৫ ডিসেম্বর শহরের ডিভাইন সেন্টারে উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের জরুরী যৌথ সভা করা হয়।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধুরীরর সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার এবং যশোর-২ (চৌগাছা- ঝিকরগাছা) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব) অধ্যাপক ডাক্তার নাসির উদ্দিন। উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির ৭১ সদস্য এবং পৌরসভা কমিটি ও ৯টি ওয়ার্ডের সভাপতি-সম্পাদকরা সভায় অংশ নেন।

মেয়র পদে বাবা-মেয়ের মনোনয়নপত্র জমা

দলীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের কাছে চৌগাছা পৌরসভায় প্রার্থী হওয়ার জন্য ৯ নেতা আবেদন করেন। জরুরী যৌথ সভায় পৌর মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চাওয়া ৯ নেতাকে নিয়ে আলোচনা হয়। তবে সভায় এ বিষয়ে একমত হতে না পারায় আলাদা আলাদাভাবে ৫ জন প্রার্থীর জীবনবৃত্তান্ত কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

উপজেলা আওয়ামী লীগ যে পাঁচজন প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছে তারা হলেন, বর্তমান পৌর মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমানের সহধর্মিনী রোকেয়া রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর আব্দুল মজিদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পৌর কাউন্সিলর সিদ্দিকুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জসিম উদ্দিন। তবে এদের মধ্যে রোকেয়া রহমানের জীবনবৃত্তান্তে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন এবং জসিম উদ্দিনের জীবন বৃন্তান্তে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি সুপারিশ করেননি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের পাঠানো ৫ জন ছাড়া প্রার্থী হতে চাওয়া অপর নেতারা হলেন, উপজেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য শ্যায়লা জেসমিন, উপজেলা যুবমহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিমা খাতুন, জেলা পরিষদ সদস্য দেওয়ান তৌহিদুর রহমান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রেজওয়ান হাবিব আলিফ।

দলীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা কমিটির কাছে মনোনয়ন চাওয়া ৯ জনের মধ্যে রেজওয়ান হাবিব আলিফ ছাড়া ৮ জনই কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন কিনবেন। এছাড়াও মনোনয়ন কিনতে পারেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এসএম সাইফুর রহমান বাবুল। তিনি ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রায় ৩ হাজার ৭শ ভোট পেয়েছিলেন। আর নৌকার প্রার্থী নূর উদ্দিন আল মামুন হিমেল ৪ হাজার ২শর কিছু বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনেও তিনি অন্যতম প্রভাবশালী প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে দলীয় অবস্থান শক্ত হওয়ায় ৫ ডিসেম্বরের যৌথ জরুরী সভায় তিনি উপজেলা কমিটির কাছে প্রার্থীতা চাননি, তাকে নিয়ে কোন আলোচনাও হয়নি। অবশ্য পরে জনপ্রিয় প্রার্থীদের বিষয়ে কেন্দ্রের কিছুটা শিথিল অবস্থানের বিষয়টি পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পাওয়ার পর তিনি কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন কেনার বিষয়ে আগ্রহী হন। এখন এই ৯ নেতার মধ্যে দলীয় প্রতীককে পাবেন বা পাচ্ছেন তা নিয়েই পৌরসভাসহ গোটা উপজেলা জুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

তবে দলীয় বিভিন্ন সূত্র এবং মেয়র প্রার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ১৪ বা ১৫ জানুয়ারী দলের স্থানীয় সরকার বিষয়ক মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে দলীয় প্রার্থীর নাম চুড়ান্তভাবে ঘোষণা করা হবে। সে হিসেবের ১৪ অথবা ১৫ জানুয়ারী রাতে জানা যেতে পারে চৌগাছা পৌরসভার ৪র্থ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী কে হচ্ছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক আমরা দলের জরুরী যৌথ সভার সিদ্ধান্তে ৫ প্রার্থীর নাম ইতোমধ্যেই কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। কেন্দ্রীয় স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড যাচাই-বাছাই করে যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকে মনোনয়ন দেবেন।

তিনি আরো বলেন, কেন্দ্র থেকে যাকে নৌকা প্রতীক দেয়া হবে আমরা তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করবো।

স্বাআলো/এসএ