মাঠ প্রশাসনে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের অপরাধ প্রবণতা কমাতে কঠোর হচ্ছে সরকার। সরকারি চাকরি বিধিমালা মেনে চলার জন্য বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে মাঠ প্রশাসন কর্মকর্তাদের এরইমধ্যে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিসিএস ক্যাডারের বিভিন্ন ফোরামে এই সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র বলছে, যে সব কর্মকর্তা দুর্নীতিসহ অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত, অপরাধের ধরন দেখে তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে। শাস্তি হিসেবে কাউকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া, বিভাগীয় মামলা করা, পদোন্নতি বন্ধ এমনকি ওএসডি করা হবে। অপরাধের ধরন দেখে প্রয়োজনে ফৌজদারি মামলাও হতে পারে তাদের বিরুদ্ধে। তবে ফৌজদারি মামলা করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সরকারি অফিস এভাবে চলতে পারে না
জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, মাঠ প্রশাসনে অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আচরণবিধি মেনে চলতে কঠোরভাবে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, প্রশাসনে কর্মরত সবাইকে সততা ও নিষ্ঠাবান হওয়ার বার্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই দিয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সেই অনুযায়ী প্রশাসনকে কঠোরভাবে পরিচালনা করে আসছেন। এরই মধ্যে হঠাৎ মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তাদের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবীদের ছত্রছায়ায় বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হয়ে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন তারা। ওই সব কর্মকর্তাদের মধ্যে ইউএনও ও অ্যাসিল্যান্ডের সংখ্যাই বেশি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, অপরাধের সঙ্গে জড়িত মাঠপ্রশাসনের ওইসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে শাস্তিস্বরূপ বদলির পদক্ষেপ নিলে সেখানে বদলি ঠেকাতে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হস্তক্ষেপ চলে আসছে। প্রশাসনে কোনোভাবেই যেন রাজনৈতিক প্রভাব না পড়ে সেই আলোচনা হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
জনপ্রশাসনের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে প্রশাসনের কার্যক্রম চালাতে হবে। জনপ্রশাসন সচিব স্যার সেই অনুযায়ী প্রশাসন পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন। এ জন্য তিনি কঠোরভাবে উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন হবে কি না প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ আমরা তো আমেরিকার মতো নই। যোগ্যতা নেই, পদোন্নতির জন্য তদবির করে, বদলি ঠেকানো এ সব নানা অসঙ্গতি তো আছেই।
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অপরাধ প্রবণতা বিষয়ে একজন ইউএনও বলেন, যারা অপরাধী অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। অনেক ইউএনও আছেন যারা শুধু বেতনের টাকায় চলেন। সবাই তো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন।
অপরাধের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, মাঠ প্রশাসনে কর্মরত কিছু কর্মকর্তাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে বাকিরা কর্মকর্তারা সামাজিক দৃষ্টিতে অপরাধী। এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। মাঠ প্রশাসনের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে আমাদের কাজ করে যেতে হবে।
প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঝে অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন।
গত ২৪ ডিসেম্বর এক অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি জানান, প্রতিদিন তাকে কয়েকটি বিভাগীয় মামলা শুনতে হচ্ছে। এসব মামলায় অনেকের শাস্তিও হচ্ছে। আবার অনেকে মাঠ পর্যায়ের অপরাধের দায় থেকে বাঁচতে তদবির করছেন, যা খুবই পীড়াদায়ক। তিনি এ সময় ইউএনও ও ভূমি অফিসে কর্মকর্তাদের উদাহরণ টানেন।
জনপ্রশাসন সচিব বলেন, বদলি হওয়ার জন্য এবং নতুন বদলি ঠেকানোর জন্য যখন তদবির করা হয়, তখন আমরা সত্যিই বিব্রত হই। একজনের কাছে জানতে চাইলাম, ঢাকায় কেন বদলি হতে চান? তখন তিনি বলেন, আমি ওই ব্যাচের সভাপতি। আমার ব্যাচের অনেক কাজকর্ম করতে হয়। এ জন্য আমার ঢাকায় আসা প্রয়োজন।
স্বাআলো/এসএ