সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় অগ্রগতি নেই

গত বছর সারাদেশে ৪ হাজার ৭৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৪৩১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৩৭৯ জন। নিহতের মধ্যে ৮৭১ জন নারী ও ৬৪৯ জন শিশু রয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান এসব তথ্য জানায়।

দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি, গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজিকে উল্লেখ করা হয়েছে।

দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি রোধে সংস্থাটি বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরেছে। এর মধ্যে- দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি, চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা তৈরি করা, পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা| সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গাড়িতে বিকল্প চালক রাখা, একজন চালকের ৫ ঘন্টার বেশি গাড়ি না চালানোসহ ৬ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন। নির্দেশনার মধ্যে ছিল গাড়ির চালক ও তার সহকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া, নির্দিষ্ট দূরত্বে সড়কের পাশে সার্ভিস সেন্টার বা বিশ্রামাগার তৈরি, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করা বা সিগন্যাল মেনে পথচারী পারাপারে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং যাত্রীদের সিটবেল্ট বাধা নিশ্চিত করা।

আরো পড়ুন>>>সরকারি অফিস এভাবে চলতে পারে না

প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে প্রাণহনির দায়ে চালকের বিচার ও শাস্তি হয় না। এমনকি শাস্তির দাবি উঠলে কিংবা মামলা হলে শ্রমিকরা বেআইনীভাবে আন্দোলন শুরু করে। আইনকে নিজস্ব গতিতে হাটার ক্ষেত্রে বাধা দেয়ার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথমে আইন প্রণয়ন করতে হবে। অপরাধীকে জেলখানায় আটকে রাখার চেয়ে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হলে অপরাধীরা ভয় পাবে। এ পৃথিবীতে টাকার ওপর মানুষের মায়া বেশি। অপরাধ সংঘটিত হবার সাথে সাথে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে তাকে জরিমানা করা হলে সবাই আপনা আপনি ভালো হয়ে যাবে।

দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। এখনই এর রশি টেনে ধরতে হবে। সেই সাথে পর্যালোচনা দেখতে হবে দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রীর যথোপযুক্ত নির্দেশনাগুলো দিয়েছিলেন তা কতটুকু পালিত হয়েছে। তা না করে ছোট গাড়ির কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে এমন সব কথা বলে মহাসড়কে ছোট যান চলাচল বন্ধ করে সাধারণ মানুষকে অহেতুক কষ্টের মধ্যে ফেলার কোনো যুক্তি নেই। সম্প্রতি যে দুর্ঘটনাগুলো ঘটলো তার একটিও ছোট গাড়ির কারণে ঘটেছে বলে জানা যায়নি। তাছাড়া বাসে তো ৪-৫ কিলোমিটারের দূরত্বের যাত্রীদের উঠায় না। তাহলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা কি ভাবে স্কুল-কলেজে যাবে সেটা ভেবে দেখতে হবে। সিদ্ধান্ত একটা চাপিয়ে দিলেই হবে না। আর যদি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পালিত না হয় তাহলে নতুন করে সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে লাভটা কি? সড়ক দুর্ঘটনা একেবারে নির্মূল করা সম্ভব নয় এ কথা সত্যি, তবে তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখাটা অসম্ভব নয়। যাদের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে, একই সাথে দুর্ঘটনা রোধে সচেনতা সৃষ্টি ও আইন মেনে চলার মানসিকতা তৈরিতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। কঠোর আইন প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে তা দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সহায়ক হতে পারে।

স্বাআলো/আরবিএ