দু’জন একই মাধ্যমে কাজ করেন। জন্মেছিলেনও একই দিনে। একজন অভিনয় দিয়ে লাখো ভক্তের মন জয় করে চলে গেছেন না ফেরার দেশে, অন্যজন এখনো তার সুরের যাদুতে মুগ্ধ করে রাখেন এদেশের গানপ্রেমীদের। বিশেষ করে যারা রবীন্দ্রসংগীত পছন্দ করেন। বলছি কৌতুক অভিনেতা দিলদার এবং সংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কথা। আজ তাদের জন্মদিন।
বাংলা চলচ্চিত্রে সবচেয়ে বেশি হাস্যরস ফুটিয়ে তোলার মানুষটির নাম দিলদার। কৌতুক অভিনেতা হিসেবে তিনি ছিলেন কিংবদন্তি। দিলদার চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন ১৯৭২ সালে। তার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কেন এমন হয়’। ধীরে ধীরে অপ্রতিদ্বন্দ্বী কৌতুক অভিনেতার আসন দখল করে নেন দিলদার। তার জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে ছিলো যে, তাকে নায়ক করেই নির্মাণ করা হয়েছিল ‘আব্দুল্লাহ’ নামে একটি চলচ্চিত্র।
এমন অনেক ছবি ছিলো যেগুলোর চিত্রনাট্য শুধু দিলদারের জন্য আলাদা ভাবে লেখা হতো। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ‘বিক্ষোভ’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘কন্যাদান’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘সুন্দর আলী জীবন সংসার’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘শান্ত কেন মাস্তান’, ‘গাড়িয়াল ভাই’, ‘অচিন দেশের রাজকুমার’, ‘প্রেম যমুনা’, ‘বাঁশিওয়ালা’ ইত্যাদি।
২০০৩ সালে সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে ‘তুমি শুধু আমার’ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন দিলদার। একই বছরের ১৩ জুলাই মারা যান অসম্ভব জনপ্রিয় এই মানুষটি। পরে তাকে ঢাকার ডেমরায় অবস্থিত সানারপাড় এলাকার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। দিলদারের জন্ম হয়েছিল চাঁদপুরের সদর উপজেলার শাহতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা
বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে আবির্ভূত একজন প্রথিতযশা রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। তিনি তার ঘরানার সংগীতের একজন বহুমুখী প্রতিভা হিসাবে বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপকভাবে সমাদৃত । তিনি তার গুনানুরাগীদের কাছে শুধু মাত্র ‘বন্যা’ নামেও পরিচিত। সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে কাজের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ অর্জন করেছেন।
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা’র জন্ম বাংলাদেশের রংপুরে। তার বাবা মাজহার উদ্দিন খান ও মাতা ইসমাত আরা খান। তিনি প্রাথমিক অবস্থায় বাংলাদেশের ছায়ানট ও পরে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোন দেশে ফিরে অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হন। কিন্তু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি পড়াশোনা সংক্ষিপ্ত করতে বাধ্য হোন।
বন্যা রবীন্দ্রসংগীত ছাড়াও ধ্রুপদী, টপ্পা ও কীর্তন গানের ওপরও শিক্ষা লাভ করেছেন। তার গানের অ্যালবাম পশ্চিম বাংলা ও বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯২ সালে তিনি সুরের ধারা নামের একটি সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। ২০০২ সালে পান আনন্দ সংগীত পুরস্কার। কর্মজীবনে তিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপার্সন হিসেবে কর্মরত। লেখালেখির সঙ্গেও বন্যার যোগসূত্র আছে। রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে তার কয়েকটি বই আছে।
স্বাআলো/এসএ