অপরাধ জগতে শিশু-কিশোর

অপরাধ জগতে শিশু-কিশোরদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। নানা ধরণের অসামাজিক কর্মকাণ্ডে তারা জড়িয়ে তো পড়ছেই। কিশোররা এলাকায় মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন, চাঁদাবাজি এমনকি হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। গত তিন বছরে র‌্যাব প্রায় ৪০০ কিশোরকে গ্যাং গ্রেফতার করেছে।

গোয়েন্দা তথ্যমতে, প্রতিটি গ্রুপেই রয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন করে সদস্য। রাজধানীতে প্রায় ৬০টি কিশোর গ্যাংয়ের সন্ধান পেয়েছে। এর মধ্যে ৩৪ গ্রুপই সক্রিয় রয়েছে। ঢাকার শিশু আদালতের বিচারিক কার্যক্রমের নথি অনুযায়ী গত ১৫ বছরে রাজধানীতে কিশোর গ্যাং কালচার ও সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে ৮৮টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত ১ জানুয়ারি রাজধানীর মহাখালীতে কিশোর গ্যাং গ্রুপের ছুরিকাঘাতে আরিফ হোসেন (১৭) নিহত হয়। এমন চিত্র শুধু রাজধানীতে নয়, মফস্বলেও।

এর কারণ হিসেবে সমাজ বিজ্ঞানীদের মতাততে বলা হয়েছে শিশু-কিশোরদের অপরাধী হবার ক্ষেত্রে উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, রাজনৈতিক ও সামাজিক আধিপত্য বিস্তারের হীন স্বার্থে শিশু-কিশোরদের ব্যবহার এবং পারিবারিক অশান্তি এই অবক্ষয়ের কারণ। ইন্টানেট তথা তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারে ধ্বংসের পথে পা বাড়িয়েছে শিশু-কিশোররা। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকরা সবার আগে সবচেয়ে বেশি দায়ী। বিজ্ঞানের অগ্রগতির দিনে ইন্টারনেট তথা তথ্যপ্রযুক্তি থাকবেই। একে এড়িয়ে জীবন চলার কোন উপায় নেই। এর কল্যাণের কথা অস্বীকার করা মুর্খতার সামিল।

আরো পড়ুন>>>প্রবাসীদের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রীর নন্দিত পদক্ষেপ

তবে এ কথা ঠিক যে, জীবনের প্রয়োজনে বিজ্ঞানের অবদান থেকে এই শিশু-কিশোররা কতটুকু গ্রহণ করতে পারছে। বাড়িতে প্রাইমারি স্কুল পড়–য়া কোমলমতি শিশুরা মোবাইল, টেলিভিশন ও কম্পিউটার ব্যবহারের অবাধ সুযোগ পাচ্ছে। সেখান থেকে তারা কি পাচ্ছে? জীবনের জন্য অপরিহার্য কিছু কি তারা তথ্যপ্রযুক্তি থেকে আহরণ করতে পারছে। তারা এর পরিবর্তে তাদের কাছে আকর্ষণীয় অপরাধের উপাদানই সংগ্রহ করছে বেশি। অসচেতন অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারে নিরুৎসাহিততো করছেনই না, উপরোন্তু শিশুরা যখন প্রাথমিক গণ্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিক স্তরে ঢুকছে তখন তাদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন অত্যাধুনিক মোবাইল। আর এই মোবাইল অপব্যবহারে তারা সহজেই পাচ্ছে শিশু-কিশোর মানস ধ্বংসের উপকরণ। অতি অল্প বয়সে তারা পাঠ বিমুখ হয়ে ড্রাগ এডিক্টের মত মোবাইল এডিক্ট হয়ে পড়ছে। ক্লাসে একদিকে শিক্ষক পাঠদান করেন অন্য দিকে ছাত্ররা বসে মোবাইলে ফেসবুক দেখে এমন অভিযোগও শোনা যাচ্ছে অহরহ। আর মোবাইলে ফেসবুক দেখতে গিয়ে পথ চলতে তারা পথহারা হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, বর্তমানে কিশোর গ্যাং একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা চাই না তারা ড্রাগ (মাদক) নিয়ে নষ্ট হয়ে যাক। বিষয়গুলোর প্রতি পরিবারের সদস্যদের সচেতন হতে হবে। এটা আপনাদের দায়িত্ব। দায়িত্ব না নিতে পারলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন কেন? এ দায়িত্ব পরিবারকে নিতেই হবে।

আজকের শিশু-কিশোররাই আগামি দিনের ভবিষ্যৎ। জাতির স্বার্থে তাই তাদের অধপতনের দুয়ার থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের গড়ে তুলতে হবে দক্ষ মানুষ হিসেবে। তা না হলে এ জাতি একদিন অতল গহবরে হারিয়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। মাঝে মাঝে শোনা যায় উচ্চ মাধ্যমিকের নিচের শিক্ষার্থীদের হাতে মোবাইল নয়। কিন্তু তা আর বাস্তবে নজরে পড়ে না। জাতির সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়তে হলে শিশু-কিশোরদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। নিয়মের শৃংখল কিছুটা নির্মম হলেও তা গলায় পরাতেই হবে। রোধ করতেই হবে এ অবক্ষয়। এ বাস্তবতা যত তাড়াতাড়ি উপলদ্ধি করা যায় ততই মঙ্গল।

স্বাআলো/আরবিএ