দিন বদলের হাওয়া বইছে মাগুরা শহরের ঋষি পল্লিতে। মাত্র এক দশক আগে যে সব পরিবার প্রধানদের মূল পেশা ছিল পুরানো জুতা স্যান্ডেল সেলাই করা। এখন সে সব পরিবারের অন্তত ৮০ ভাগ এগিয়ে এসেছে নতুন জুতা স্যান্ডেল তৈরির পেশায়। পূর্ব পুরুষের পেশাকে রূপান্তর ঘটিয়ে নতুন রূপ দিয়েছে তারা। বদলে ফেলেছে অভাব অনটনের সাথে লড়াইয়ের সেই সব কষ্টের দিনগুলো।
শহরের পিটিআই সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে প্রায় ১০০ পরিবার নিয়ে এ ঋষি পল্লি। সেখানে গেলেই চোখে পড়বে ছোট ছোট টিনসেড দোকান ঘরে জুতা স্যান্ডেল তৈরির কারখানা গড়ে উঠার চিত্র। অধিকাংশ পরিবারই তাদের বাসগৃহের সামনের দিকটায় ছোট ছোট ঘরে গড়ে তুলেছে এ সব কারখানা। যেখানে সুন্দর ও আকর্ষণীয় ডিজাইন অনুসরণে তৈরি হচ্ছে নানা বয়েসি নারী পুরুষের জুতা স্যান্ডেল।
ছোট ছোট এ সব কারখানায় তৈরির জন্য যন্ত্রপাতি কিনতে খরচ পড়েছে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। কারখানায় তৈরির পর ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার চামড়া আনুষঙ্গিক কাঁচামাল নিয়েই যাত্রা শুরু করেছেন ঋষি পল্লির এসব কারখানা মালিকেরা। প্রতিটি কারখানা স্থাপনেই উপকরণ হিসেবে প্রয়োজন হয়েছে একটি সাধারণ সেলাই মেশিন, চামড়া কাটার জন্য ছোট ছোট কিছু ধারালো অস্ত্র ও বার্নিস মেশিনের মত স্বল্পমূল্যের যন্ত্রপাতি। যার উপর ভিত্তি করেই প্রতিমাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার জোড়া জুতা সেন্ডেল তৈরি হচ্ছে এই পল্লিতে। যা মাগুরাসহ বিভিন্ন জেলায় খুচরা ও পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে।ডিজাইন, স্থায়ীত্ব ও মূল্যের দিক দিয়ে সুবিধাজনক হওয়ায় দিনকে দিন এখানকার জুতার চাহিদা বাড়ছে। এখানে এক জোড়া জুতা খুচরা মূল্যে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, এক জোড়া সেন্ডেল ১৬০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়া এ সব কারখানা স্থাপনের ফলে ২০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এক ডজন সেন্ডেল তৈরি করে কারখানায় কর্মরত একজন কারিগর ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা মজুরি পায়।
আরো পড়ুন>>>মাগুরায় এসিড সিসার বিষক্রিয়ায় গরুর মৃত্যু তদন্তে আইইডিসিআর
ঋষি পল্লির জুতা ব্যবসায়ি স্বপন কুমার দাস জানান, বর্তমানে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ ব্যবসায় টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রেই বড় বড় কোম্পানি থেকে এক সঙ্গে অনেক মালের অর্ডার আসে। সে ক্ষেত্রে তারা পুঁজি সংকটে পড়েন। এ কারণে জরুরি প্রয়োজনে চড়া সুদে মহাজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। এমনকি এই চড়া সুদের ফাঁদে পড়ে অন্তত ২০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে সরকারি পৃষ্ঠপোশকতার পাশাপাশি এ শিল্পকে বাঁচানোর জন্যে সহজ সর্তে ঋণ দেবার প্রয়োজন।
একটি কারখানায় কর্মরত জুতার কারিগর অসিম কুমার দাস জানান, দ্রব্য মূল্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে কম মজুরিতে তারা এ পেশায় টিকে থাকতে পারছেন না। এ কারণে তারা তাদের মজুরি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন।
স্বাআলো/আরবিএ