সহিংস পৌর নির্বাচন

দেশজুড়ে কয়েকধাপে দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পৌরসভা নির্বাচন। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও এই নির্বাচন দিন দিন সহিংস হয়ে উঠছে। প্রথম ধাপের ভোট সুষ্ঠু হলেও এরপর সহিংসতায় একাধিক ব্যক্তি নিহত ও অনেকে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সব চেয়ে আলোচিত ঘটনা হলো ঝিনাইদহের শৈলকূপার সহিংসতা। মূলত কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের সমর্থকরাই আধিপত্য বিস্তার থেকে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। শৈলকূপার কাউন্সিলর প্রার্থী শওকত হোসেনের ভাই লিয়াকত হোসেন বল্টুকে ১৩ জানুয়ারি দিনগত রাত ৮টার সময় কুপিয়ে হত্যা করা হয়।তিনি ভাইয়ের নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি উমেদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। এ ঘটনার ৫ ঘন্টা পর রাত ১টায় অপর প্রার্থী আলমগীর হোসেন বাবুর লাশ উদ্ধার করা হয় কুমার নদ থেকে। গত ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে গোলাগুলিতে আজগর আলী বাবুল (৫৫) নামে একজন নিহত হন। একই দিনে নারায়ণঞ্জের তারাব পৌরসভা নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে দুই কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে দুপক্ষই তাদের ১৫/২০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে দুপক্ষের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

এর আগের দিন ১১ জানুয়ারি গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলা পাল্টাহামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় শ্রীপুর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। পাল্টাপাল্টি মামলা দুটিতে শ্রীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ ১৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। উভয় মামলায় বাদীরা হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেছেন। গত ১ জানুয়ারি পাবনার সাঁথিয়া পৌর নির্বাচনে পোস্টার লাগানো নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হন।

আরো পড়ুন>>> প্রবাসীদের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রীর নন্দিত পদক্ষেপ

২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ২৪ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ২৬ ডিসেম্বর ঢাকার ধামরাইয়ে প্রচারের সময় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে কাউন্সিলর প্রার্থীসহ আহত হন অন্তত ১০ জন। এর পরদিন কুষ্টিয়ায় ১৩ নম্বর বারখাদা ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে সোহেল সরকার (৫০) নামের একজনের মৃত্যু হয়। আহত হন পাঁচজন।

নির্বাচন কমিশন বলেছে সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচনের জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রামে একটি ঘটনা ঘটে গেছে। নির্বাচন রিলেটেড হোক কিংবা এর বাইরে হোক, নির্বাচনকালে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সহিংসতা রোধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, এই সহিংসতা তো বিরোধীদের মধ্যে হচ্ছে না। নিজেদের মধ্যেই হচ্ছে। ড. তোফায়েল ঠিকই বলেছেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীরা যদি এভাবে সহিংসতায় নামেন তাতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। যারা সহিংসতা করছেন তারা যে বিষয়টা বোঝে না তা নয়। কিন্তু এখানে দলের চেয়ে ব্যক্তির স্বার্থ বড় করে দেখছেন। ব্যক্তির চেয়ে দল বড় এবং দলের চেয় দেশ বড় এ কথার উল্টো পথে চলে তারা। দলে এদেরকে চিহ্নিত করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া জরুরী।

স্বাআলো/এস