প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত জালিয়াতি, তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

জালিয়াতির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে বদলে দেয়ার অভিযোগে করা একটি মামলা দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই মামলার আসামি নাজিম উদ্দীনের করা জামিন আবেদনের শুনানিকালে সোমবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি বদরুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। সেই সঙ্গে আদালত মামলার আসামিদের আবেদন দুদকের এখতিয়ারভুক্ত কোনো বেঞ্চে উপস্থাপন করতে বলেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. বশির উল্লাহ।

জামিন বাতিল সংক্রান্ত হাইকোর্টের চার নির্দেশনা আপিল বিভাগে স্থগিত

জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।

মামলার বিবরণে জানা যায়, গত বছর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম এনামুল হক, বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রউফ ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদের নাম প্রস্তাব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি সার-সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

সেই সার সংক্ষেপের নথি উপস্থাপনের পর প্রধানমন্ত্রী অধ্যাপক ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে টিক চিহ্ন দেন। পরে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য নথিটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর প্রস্তুতি পর্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অফিস সহকারী ফাতেমার কাছে এলে এম আবদুস সালাম আজাদ অনুমোদন পাননি বলে গোপনীয় তথ্য ফোনে ছাত্রলীগনেতা তরিকুলকে জানিয়ে দেন।

এরপর গত ১ মার্চ নথিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কৌশলে বের করে ৪ নম্বর গেটের সামনে আসামি ফরহাদের হাতে তুলে দেন ফাতেমা। এই কাজের জন্য ফাতেমাকে আসামিরা ১০ হাজার টাকা করে বিকাশে মোট ২০ হাজার টাকা দেন বলে অভিযোগ আনা হয়।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে ড. এম এনামুল হকের নামের পাশে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া টিক চিহ্নটি ‘টেম্পারিং’ করে সেখানে ক্রস চিহ্ন দেন। একইভাবে অধ্যাপক আব্দুর রউফের নামের পাশেও ক্রস চিহ্ন দিয়ে এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদের নামের পাশে টিক চিহ্ন দেন।

গত ৩ মার্চ আসামিরা নথিটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠান। তবে একপর্যায়ে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে যায়। জালিয়াতির ওই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ মোহাম্মদ রফিকুল আলম বাদী হয়ে গত ৫ মে মামলা করেন।

মামলার আসামিরা হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি (বহিষ্কৃত) তরিকুল ইসলাম মমিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মচারী ফাতেমা খাতুন, নাজিম উদ্দীন ও রুবেল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফরহাদ হোসেন ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদ।

তাঁদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর এম আবদুস সালাম আজাদ পলাতক রয়েছেন। আসামিদের মধ্যে তরিকুলসহ চারজন অভিযোগ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। ওই ঘটনার পর তরিকুলকে ছাত্রলীগের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

স্বাআলো/এসএ