মোহন সুন্দর একটা ছেলে। কোটিপতির ঘরের সন্তান। দেখতে দেখতে সে এইএসসি পাশ করে খুলনা থেকে রাজশাহীতে অনার্স পড়তে যায়। ভাল সাবজেক্টে মেধাবী ছাত্রকে পেয়ে খুশি হয় শিক্ষকরা। আর টাকাপয়সাওয়ালা ধনী বন্ধু পেয়ে খুশি হয় নেশাখোর বন্ধুরা। প্রথম প্রথম সে ক্লাস করতো, তবে বন্ধুদের সাথে মিশতো না। কিন্তু একঘেঁয়েমী ও ক্লান্তি কাটাতে সে ছুটির দিন বা শুক্রবারে একটু আধটু সময় দিতে দিতে আড্ডা দেবার নামে কখন যে সিগারেটের ধোঁয়ায় বুদ হয়ে যায়। সিগারেটের নেশা থেকে শুরু হলেও সব ধরনের নেশায় আসক্ত হয় সে। কখনো কখনো নেশাগ্রস্ত হয়ে হোস্টেলে ফেরে। ক্লাস বা টিউটেরিয়াল পরীক্ষায় তেমন উপস্হিত হয়না।কিন্তু পড়াশুনার কথা বলে বাবার কাছ থেকে অধিক টাকা নিয়ে নেশা করতো। মোহনের একটা বান্ধবী ছিল নিজের এলাকায়। সে একটু আধটু খোঁজ নিতো।কিন্তু আজ আর মোহন সেঁজুতীকে পাত্তাই দেয়না। সন্ধ্যায় মোহন বন্ধুদের নিয়ে নেশার আড্ডা বসায়।
হঠাৎ এক সন্ধ্যায় সেঁজুতি কেনাকাটা করে রুমে ফিরছিল। সে সময় মোহনও নেশায় বুদ। বাড়তি টাকার জন্য সে সেঁজুতির ব্যাগ ধরে টান দেয়, কিন্তু হাত থেকে ছাড়াতে পারে না।সে মোহনকে একটা চড় মারে না চিনতে পেরে। তারপর চিৎকার করে বাঁচাও ছিনতাইকারী, বাঁচাও, বাঁচাও।
মোহন বলে আমাকে ক্ষমা করে দাও। কাঁপতে কাঁপতে বলে ওরা এলে আমাকে মেরে ফেলবে. আমাকে বাঁচতে দাও।
সেঁজুতি বলে, একি তুমি! তুমি এসব করছ কবে থেকে? তোমার বাবা মা কত বিশ্বাস করে পড়াশোনা করতে পাঠিয়েছে, তুমি এসব কি করছ? ছি! বলতে বলতে মোহনের হাত ধরলো। ততক্ষণে মোহন মাটিতে পড়ে গেল।
সেঁজুতি রিকশা ডেকে মোহনকে ধরে হাসপাতালে নিয়ে গেল। ডাক্তার ভালো করে দেখে তাকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করলেন। ততক্ষণে সেঁজুতি মোহনের বাবা মাকে ফোনে সব জানিয়ে হাসপাতালে আসতে বলে। সাথে সাথে মা বাবা রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হন। সকালে হাসপাতালে ঘুম ভাঙতেই দেখল বাবা মা সামনে দাঁড়িয়ে।
আরো পড়ুন>>> শীতের দুটি কবিতা
বাবা বলে শোনো খোকা, তোমার কোনো দোষ নেই, দোষ আমার, আমার অর্থের। তবে বেশি দেরি হয়নি, তোমাকে সুস্থ করবো, তুমি আবার ভালো হয়ে যাবে।
মোহন কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে তোমরা আমাকে মাফ করে দাও, আমি ভালো হতে চাই বাবা।
মোহন মাদক নিরাময় থেকে চিকিৎসা নিয়ে কয়েক মাসেই সুস্হ হয়ে ফিরে আসে বাড়িতে। তখন সে ওয়াদা করে আর কখনো নেশা করবে না।
মা বলে খোকা, তুই সুস্হ হয়ে ফিরেছিস এটাই তো অনেক, ভুল বুঝেতে পেরেছিস, আর কখনো এসব করবি না।
মা বলে ওপরওয়ালার কাছে এটাই চাওয়া বাবামায়ের কোনো সন্তান যেন এমন মরণ নেশায় বুদ না হয়….
লেখক: রাম প্রসাদ কুন্ডু, লেখক ও হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার
স্বাআলো/আরবিএ