বেকারত্ব অথবা আইন সনদ নিবন্ধন পদ্ধতি সংস্কার

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনজীবী অন্তুর্ভুক্তিকরণ পরীক্ষায় যখন একজন শিক্ষানবিশ অনুত্তীর্ণ হওয়ার সময়কালে চাকুরির স্বাভাবিক বয়সসীমাও খুঁইয়ে বসে। তখন বেকারত্বের দুর্ভোগে পতিত শিক্ষানবিশ ‘না পায় শ্যাম আর না পায় কুল’ অবস্থায় স্বপ্নভঙ্গের শিকার হয়। বিশেষায়িত আইন স্নাতক হওয়ার পরে পেশা প্রবেশে আইনজীবী সনদ অর্থাৎ অনুমতিপত্রের জন্য পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার প্রসঙ্গ মোটেও যৌক্তিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন কোর্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণের মধ্য দিয়ে যোগ্যতা বহন করে আইনজীবী সনদের অধিকার অর্জিত হয়েছে। আইন স্নাতকের আবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষানবিশ কাল শেষে আইনজীবী হিসেবে স্বীকৃত হওয়া উচিত।

সনদপ্রার্থীকে লাইসেন্স বা অনুমতিপত্রের জন্য জীবনবৃত্তান্ত, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও শিক্ষানবিশ কাল সম্পন্নের পারফরমেন্স সমেত সিনিয়র আইনজীবী কর্তৃক প্রত্যয়ন যাচাই করে আইনজীবী সনদ প্রদান প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল দক্ষতার সাথে তদারকি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ যথোপযোগী হয়। একাডেমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা বার কাউন্সিলের ক্রিয়াকাণ্ড হতে পারেনা। শিক্ষানবিশদের কাঁধে অন্যায়ভাবে আইনজীবী সনদ পরীক্ষা চাঁপানো হয়েছে। অসাধু উদ্দেশ্যে পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। বিগত পরীক্ষাগুলোর প্রশ্নপত্র শিক্ষানবিশগণের উপযোগী ছিলনা। এমসিকিউ পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্কিং, লিখিত পরীক্ষা ১০০ নম্বরের হলেও প্রশ্নপত্র বহুগুণ অধিক নম্বরসম্বলিত ও ত্রিধাপের শেষ ধাপ ভাইভা অনুত্তীর্ণ ঘটনার ব্যাখ্যা কী হতে পারে? প্রচলিত পরীক্ষা নিয়মিত না হওয়া, পরীক্ষার খাতা ওএমআর বিহীন, পরীক্ষার খাতা রিভিউ না করা ও নিয়মিত ফলপ্রকাশের অনীহায় দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। হীনস্বার্থে জনগণের পকেট কেটে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। মুরুব্বিতন্ত্রের মোড়লির খপ্পরে তরুণের আইনজীবী হওয়ার স্বাভাবিক স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে। বার কাউন্সিলের টার্গেটে স্বপ্নবান তারুণ্যের আইন পেশায় ক্যারিয়ারের উচ্চতর লক্ষ্য খুন হয়ে যায়। বার কাউন্সিল শিক্ষানবিশের হন্তারকে পরিণত হয়েছে। পরীক্ষা কখনও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক নয়। বরং বার কাউন্সিল পরীক্ষার দুর্নীতি-ভুলনীতির নানা অভিযোগ, এটাকে ছাঁটাই পরীক্ষা বলা অযৌক্তিক হবেনা।

আইন বিষয়ে কাম্য ছাত্রসংখ্যা, শিক্ষানবিশ কাল এক বছর, শিক্ষানবিশ সম্মানী ফি, নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত মামলায় অংশগ্রহণ ও শিক্ষানবিশকালে নির্দিষ্ট সংখ্যক সেমিনার, কর্মশালা ও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ সাপেক্ষে আইনজীবী সনদের দাবিগুলো শতভাগ ন্যায়সঙ্গত ও যৌক্তিকতার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন সর্বাগ্রে করা দরকার।

বিশ্বে বেকারত্ব বাড়ছে এমন দেশের তালিকায় শীর্ষতম স্থানে আমাদের দেশের নাম রয়েছে। সরকারের ঘোষণা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশ’কে আগামী ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলাকে বাস্তবে রুপ দিতে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি ঘটানো আশু করণীয়। বর্তমানে দেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকারের বড় একটা অংশের দখলে শিক্ষানিবশদের দেখা যায়। শিক্ষিত বেকারেরা সমাজে সবচেয়ে বেশি সামাজিক অবহেলিত অবস্থায় ভুগে মরছে।

রাষ্ট্রের আইন ও শাসন ব্যবস্থাকে সুচারুভাবে পরিচালনায় সর্বাত্মক সহযোগীতা বিজ্ঞ আইনজীবীরাই করে চলেছে। আইন পেশাকে আরো শক্তিশালী গ্রহণযোগ্য গড়ে তুলতে যেমন যোগ্য আইনজীবী দরকার তেমনি এ পেশাতে আসতে সঠিক নিয়মতান্ত্রিক পদক্ষেপও দরকার। দরকার এ পেশার তালিকাভূক্তির আধুনিকায়ন। বিদ্যমান আইনজীবী অন্তুর্ভুক্তিকরণ পদ্ধতি সর্বতোমুখে ব্যর্থতা, সংকীর্ণতা ও সীমাবদ্ধতাকে আনয়ন করেছে। ১ বছর শিক্ষানবিশকাল অন্তে নির্দিষ্ট সংখ্যক কর্মশালা, প্রশিক্ষণ ও সেমিনারে অংশ গ্রহণ সাপেক্ষে আইনজীবী সনদ প্রদান শতভাগ ইনসাফ, আইনজীবী অন্তুর্ভুক্তিকরণ পদ্ধতি সংস্কারের মাধ্যমে হাজারো বেকার-কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পাবে। বিশেষায়িত আইন পাঠ উত্তীর্ণদের অনৈতিক পন্থায় পিছনে ফেলে রাখা চলবেনা। দেশ তথা বিশ্বসমাজকে কল্যাণ, মানবিক ও সমতার গন্তব্যে নিতে হলে আইন পেশার মতো অন্যান্য বিশেষায়িত কর্মক্ষেত্রে অবারিত করতে হবে।

কর্মসংস্থানকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেয়ার সদিচ্ছা থাকা খুব প্রয়োজন। সময়ের আহবানে পেশাজীবনে প্রবেশে সংরক্ষণবাদ পরিহার করে এগোতে হবে। আইন পেশায় প্রবেশে শিক্ষার্থীকে, তার শিক্ষানবিশি শেষে আইনজীবী সনদ অধিকারের ন্যায্য দাবি থেকে বঞ্চিত রাখা কোনভাবেই চলতে পারেনা। জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, জনগণ অভিমুখী সেবার লক্ষে অবিলম্বে আইনজীবী অন্তর্ভুক্তিকরণ পদ্ধতি সংস্কার করা খুবই জরুরি।

লেখক: সুজন বিপ্লব।। আহবায়ক, আইনজীবী সনদ অধিকার আন্দোলন, কেন্দ্রীয় কমিটি