
নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিনের মেয়াদোত্তীর্ণ কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। দলীয় সভাপতির একের পর এক গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকান্ডের কারণে ধীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া নেতাকর্মীরাও বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন। সর্বশেষ সভাপতি একক স্বাক্ষরে উপজেলার দুইটি ইউনিয়নে কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি দেয়া হয়েছে। এর আগে খোদ সাধারণ সম্পাদককেই বহিষ্কার করেন তিনি।
জানা যায়, যশোরের কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল। ত্রি-বার্ষিক ওই সম্মেলন থেকে এসএম রুহুল আমিনকে সভাপতি ও গাজী গোলাম মোস্তফাকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। তিন বছরের সেই কমিটি এখনো বহাল আছে। ২০১৫ সালে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে এরপর থেকে আর কোন সম্মেলন হয়নি। মেয়াদোত্তীর্ণভাবেই চলছে এই কমিটি।
সূত্র বলছে, সভাপতির এমন মর্জিমাফিক তৎপরতার কারণে উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। যার মধ্যে দুইটিতে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। শুধু তাই নয়, ভোটের বিচারে বিদ্রোহীদের কাছে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন নৌকার ভোটাররা।
কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম রুহুল আমিনের স্বৈরাতান্ত্রিক তৎপরতার প্রতিবাদে ইউনিয়নে ইউনিয়নে ‘বিদ্রোহী গ্রুপ’ তৈরি হয়েছে। ফলে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে দলটি। যার প্রমাণ মিলছে সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র চারটিতে নৌকার প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। বাকি চারটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও দুইটিতে বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন। আর একটিতে এখনো ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। সবমিলে এই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীরা ভোট পেয়েছেন ৪৩ হাজারের মতো। আর এর বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা ভোট পেয়েছেন ৫৫ হাজারেরও বেশি। অর্থাৎ মূল আওয়ামী লীগ থেকে এই উপজেলার গ্রামে গ্রামে এখন বিদ্রোহীদের ভোট সংখ্যা বেশি। মূল আওয়ামী লীগ এখন বিদ্রোহীদের কাছে সংখ্যালঘু!
জানা যায়, সর্বশেষ গত ১৬ জানুয়ারি উপজেলার সাতবাড়িয়া ও সাগরদাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করেন সভাপতি। একই সাথে প্রেসবিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইউনিয়ন দুইটিতে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন তিনি। এর আগে গত ২২ এপ্রিল সভাপতি একক স্বাক্ষরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককেই বহিষ্কার করেন। আর ২০ ডিসেম্বর বহিষ্কার করেন আরো ১০ নেতাকে। তবে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে এমন কোন ক্ষমতা দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারার প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা শীরোনামের ‘চ’ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘সংগঠনের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাস্তি প্রদানের জন্য আওয়ামী লীগের নি¤œতম যে কোনো শাখা বা যে কোনো সদস্যের লিখিত অভিযোগপত্র পাওয়ার পর উপজেলা/থানা আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদ নিজেদের সিদ্ধান্তসহ উক্ত অনুরোধপত্র জেলা কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট পাঠাইবেন। জেলা কার্যনির্বাহী সংসদ এ সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়া উক্ত বিষয় বিবেচনাপূর্বক চূচূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট প্রেরণ করিবেন। ইহা ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগ স্বয়ং সংগঠনের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আবশ্যকতা বোধ করিলে জেলা কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত জ্ঞাপন করিয়া বিষয়টি বিবেচনাপূর্বক চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট প্রেরণ করিবে।’
আর একই ধারার ‘ছ’ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রতিষ্ঠানের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিবার ক্ষমতা কেবল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের থাকিবে।…’।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কারো বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হলে কেন্দ্রীয় অনুমতি আবশ্যক। আর ইউনিয়ন পর্যায়ে কমটি গঠনের পন্থা দুইটি। একটি সম্মেলনের মাধ্যমে; অন্যটি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত। কিন্তু গঠনতন্ত্রের এসব বিষয় বাদ দিয়ে সভাপতি স্বৈরাতান্ত্রিকভাবে একক সিদ্ধান্তে সবকিছুই করছেন। ব্যক্তিগত আক্রশ ও লাভে তিনি এমন তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েছেন। যার ফলে উপজেলা জুড়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সভাপতি রুহুল আমিন সাহেবের ব্যর্থতায় ইউনিয়নে ইউনিয়নে বিদ্রোহীদের পাল্লা ভারি হয়ে গেছে। অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীও নৌকা ছেড়ে বিদ্রোহীদের পক্ষে চলে গেছেন। এসব ব্যর্থতার দায় সভাপতিকেই নিতে হবে।’
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি যেটা করেছি সেটা সঠিক। গঠনতন্ত্রের এতো কিছু আমি বলতে পারবো না। দ্যাট ইজ ফাইনাল।’
.
Admin
