
ভারতের তামিল নাড়ুর যুবক প্রেমকান্ত। বাংলাদেশে থাকেন প্রেমিকা। তার টানে জুলাইয়ের শেষদিকে তামিল নাড়ু থেকে বরিশালে আসেন প্রেমকান্ত। তবে প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসা আর সব বিদেশিদের মতো তার ভাগ্যে শিঁকে ছেঁড়েনি। বরিশাল শহরে উল্টো পিটুনি খেয়েছেন এই তামিল যুবক।
বাংলাদেশি তরুণীর প্রেমে পড়া প্রেমকান্ত একজন নৃত্যশিল্পী। বরিশালে প্রেমিকার সঙ্গে দেখাও হয়েছিলো। তবে প্রেমকান্তের বুক ভেঙে দেন বরিশালের এক যুবক। চয়ন হালদার নামের ওই যুবকের দাবি, তিনিই মেয়েটির আসল প্রেমিক। চয়নের হাতে পিটুনিও খেয়েছে প্রেমকান্ত, থানায় থেকেছেন তিন রাত।
প্রেমকান্ত জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নাচ দেখে প্রেমে পড়েন সরকারি বরিশাল মহিলা কলেজের এক ছাত্রী। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনার তালতলি উপজেলায়। ওই তরুণী প্রেমকান্তের ভিডিওতে নিয়মিত লাইক ও কমেন্টেও করতেন।
প্রেমকান্তের দাবি, ফেসবুকে পরিচয়ের পর দুইজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। টানা তিন বছর ধরে চলছে প্রেম। মেয়েটির পরিবারের সঙ্গেও তৈরি হয়েছে সুসম্পর্ক।
প্রেমকান্ত শেষমেষ মনস্থির করেন, দূর থেকে আর নয়, সরাসরি দেখবেন কাছের মানুষটিকে।
নেটওয়ার্কিং ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা প্রেমকান্ত জানান, করোনার বাধা কাটিয়ে তিনি বরিশালে আসেন ২৪ জুলাই। পরদিন বেলা ১২টায় বরিশালের সরকারি মহিলা কলেজে দুইজনের দেখা হয়। দুপুরে শহরের হান্ডি কড়াইয়ে একসঙ্গে খাবার খান। সবশেষ দেখা হয় বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধু উদ্যানে।
এরপরেই আকাশ ভেঙে পড়ে প্রেমকান্তর মাথায়। পরদিন চয়ন হালদার নামের এক যুবক দাবি করেন, তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে ওই তরুণীর। চয়ন ২৭ জুলাই নগরীর কাশিপুর চৌমাথা এলাকায় পিটুনি দেন প্রেমকান্তকে।
প্রেমকান্তের অভিযোগ, শুধু পিটুনি নয়, তার কাছ থেকে টাকাপয়সাও ছিনিয়ে নেয়া হয়। আর এ ঘটনার পর প্রেমিকা ও তার পরিবারের সঙ্গেও তিনি যোগাযোগ করতে পারেননি।
ভাঙা হৃদয় নিয়ে তামিল যুবক প্রেমকান্ত অভিযোগ দিতে গিয়েছিলেন বরিশাল মেট্রোপলিটনের এয়ারপোর্ট থানায়। সেখানে উল্টো তিন দিন তাকে পুলিশের হেফাজতে থাকতে হয়েছে। তার অভিযোগ, সিসিটিভি ফুটেজ থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ, বরং তাকেই হয়রানি করা হচ্ছে।
প্রেমকান্তর বিশ্বাস কোথাও কোনো গণ্ডগোল হয়েছে। তিনি বলেন, আমার প্রেমিকা আমাকেই ভালোবাসে। তা না হলে ও আমাকে বরিশাল আসতে বলতো না। প্রিয়তমার সঙ্গে দেখা হলে ও আমার জীবনে ফিরে আসবেই। তাই তামিল নাড়ুতে ফিরে যাওয়ার আগে একবার ওর দেখা পেতে চাই।
এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমলেশ চন্দ্র হালদার বলেন, প্রেমকান্ত বৈধভাবেই বাংলাদেশে এসেছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে থানায় আনা হলে তিনি পুরো ঘটনা খুলে বলেন। পরে ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ১ আগস্ট সকালে তাকে ঢাকার গাড়িতে তুলে দেয়া হয়। সেখান থেকে নিজ দায়িত্বে বিমানে তার ভারতে চলে যাওয়ার কথা।
পুলিশ তাকে ঢাকাগামী বাসে তুলে দিলেও মাঝপথে নেমে গিয়ে আবার বরিশালে ফিরেছেন প্রেমকান্ত। হাল ছাড়তে রাজি না হওয়া এই যুবক বৃহস্পতিবার কথা বলেছেন সঙ্গে। তিনি এবার ওই তরুণীর বাড়ি বরগুনায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
প্রেমকান্ত বলেন, পুলিশ আমাকে খুঁজছে। তবে আমাকে প্রেমিকার মুখোমুখি একবার হতেই হবে। বরগুনা গিয়ে ওর পরিবারের সঙ্গে আমি কথা বলতে চাই।
স্বাআলো/এসপি
.
বরিশাল ব্যুরো
