
আগে পাট কাটার পর পড়ে থাকতো জমি। অপেক্ষা করতে হতো মাটিতে জো আসার জন্য। এখন সময় বদলেছে। আধুনিক হয়েছে চাষাবাদ ব্যবস্থা। জমিতেই চাষ না দিয়েই চাষ করা হচ্ছে মিষ্টি কুমড়া, খিরা, পালংশাক লাউ, মুলা, শিমসহ শীতকালীন সবজি। এমন আধুনিক চাষাবাদ করছেন মাগুরা সদরের নালিয়ার ডাঙ্গি গ্রামের কৃষকরা। তারা পাট কাটার পর জমিতে চাষ না দিয়েই প্রায় ৫০০ বিঘা জমিতে চাষ করছে নানা ধরনের সবজি। আর এই চাষাবাদের সাথে জড়িত প্রায় ২৫০ জন কৃষক। এভাবে সবজি চাষা করে এখানকার কৃষকরা দেখেছেন স্বচ্ছলতার মুখ। পাশাপাশি তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন অর্থনৈতিকভাবে। অনেকটাই লাঘব হয়েছে অর্থনৈতিক কষ্ট। হাসি ফুটিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের মুখে।
নালিয়ার ডাঙ্গি গ্রামের আউয়াল খানের (৬২) ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী আক্কাস খান (৩৫) তাদেরই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যে এই গ্রামে কৃষিক্ষেত্রে ঘটিয়েছে বিপ্লব। যোগ করেছে নতুন একমাত্র। শারীরিক ভাবে অসুস্থ হওয়া স্বত্বেও থেমে যান নি জীবনের কাছে। শুধু আক্কাস কেন! গোটা গ্রামেরই চিত্রই পাল্টে গেছে। আক্কাসের জন্য গোটা গ্রামের কৃষকদের জীবনে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। মকিদুল খান, জিবলু মন্ডল, আইয়ুব আলী মন্ডল, নিশান গাজীসহ অনেক কৃষকই শারীরিক প্রতিবন্ধী আক্কাসের পরামর্শে করছেন বিনা চাষে মিষ্টি কুমড়া, লাউ, খিরা, শিমসহ শীতকালীন বিভিন্ন সবজির চাষ। পেয়েছেন সফলতা, তাদের অভাবের সংসারে এনেছে স্বচ্ছলতা।
কৃষক আক্কাস খান জানান, জমিতে কোন চাষ ছাড়াই মিষ্টি কুমড়া, লাউ ও খিরা চাষ করেছি। মাটিতে জো আসার অপেক্ষা না করেই। পাট কাটার পরপরই জমিতে চারা রোপণ করেছি। এভাবে চাষ করতে হলে আগে থেকেই বাড়িতে পলি ব্যাগের মধ্যে সবজির চারা তৈরি করতে হয়। সেচ, জৈব সারসহ অন্যান্য খরচসহ প্রতি বিঘা জমিতে চাষ করতে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। কমপক্ষে প্রতি বিঘা জমি থেকে ৪০- ৪৫ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতে পারবো। আমি এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করেছি। অন্য এক কৃষক আইয়ুব আলী মন্ডল (৫৫) জানান, আগে যেখানে পাট কাটার পর জমি পরে থাকতো। এখন আক্কাসের কথা মতো বিনা চাষে খিরা চাষ করে বেশ ভালো ফলন পেয়েছি। অর্থনৈতিক ভাবে বেশ লাভবান হয়েছি। আগামীতে এভাবে আরো করে সবজির চাষ করবো।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সুফি রফিকুজ্জামান জানান, নালিয়ার ডাঙ্গি গ্রামের আক্কাস খানের অনুপ্ররেণায় ওই গ্রামে বিনা চাষে প্রায় ৫শ বিঘা জমিতে শীতের সবজি চাষ করেছে কৃষকরা। বিনা চাষে সবজি চাষ অধিক লাভজনক। কেননা জমিতে চাষ দিতে হয় না বলে কৃষক বেশ লাভবান হয়। কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে উন্নতমানের বীজ, ফেরোমন ফাঁদ ও জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে কীটনাশক মুক্ত সবজি চাষ করতে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
স্বাআলো/এসএ
.
লিটন ঘোষ জয়, মাগুরা
