যশোরে পেট্রোলবোমায় নিহত পাপলু-মাইশার বাড়িতে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী

যশোরে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, যখনই নির্বাচন আসে, তখনই ১৯৭১-এর পরাজিত শক্তির দোসরা ষড়যন্ত্রের জাল বুনে। নির্বাচনে ভরাডুবি নিশ্চিত জেনেই সারাদেশে আগুন সন্ত্রাসে নামে। দেশে একটি অস্থিরতা তৈরি করে। রাতের অন্ধকারে কাপুরুষের মতো আগুন সন্ত্রাসীরা যাতে এবার কোনো ঘটনা ঘটাতে না পারে সেই দিকে আওয়ামী লীগ সরকার সজাগ রয়েছে।

বুধবার (২৫ জানুয়ারি) বিকালে বিএনপি-জামায়াতের হরতালে আগুন সন্ত্রাসে নিহত যশোরের ঠিকাদার জাসদ নেতা নুরুজ্জামান পাপলু ও তার মেয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী মাইশা তাসনিমের বাড়ি যশোর শহরের ঘোপস্থ পরিবারের সঙ্গে খোঁজ-খবর নেয়াকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপি-জামায়াতের অবরোধ চলাকালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করলে আট যাত্রী নিহত হন। এর মধ্যে ছিলেন যশোর শহরের ঘোপ এলাকার ঠিকাদার পাপলু ও তার মেয়ে মাইশা। কক্সবাজার থেকে ফেরার পথে তাদের সঙ্গে পাপলুর স্ত্রী মাফরুহা বেগম ও ছোট ছেলে আসিফ ইমতিয়াজ জামান থাকলেও ভাগ্যক্রমে তারা দুইজন বেঁচে যান।

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যশোরের কেশবপুরে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি যশোরে আসেন। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগে এদিন বিকালে শহরের ঘোপস্থ নিহত পাপলুর স্বজনের সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী দেখা করেন। এসময় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পপলু ও মাইশার কাটানো বিভিন্ন ছবি দেখেন। একই সঙ্গে পরিবারে সহায়তার জন্য তিন লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে বিএনপি জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। সেসময়ে অগ্নি সন্ত্রাসীরা সারাদেশে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছিলো। মায়ের চোখের সামনে সন্তান-স্বামী জ্বলে পুড়ে মারা যাচ্ছে, এর চেয়ে কষ্টকর দৃশ্য পৃথিবীতে আর হয়না। আমি আজ তাদের সান্তনা দিতে আসেনি, শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। যারা নির্মম হত্যাকাণ্ডের হোতা, যারা এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তাদের এই সমাজব্যবস্থা-রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে চিরতরে দূরে রাখতে হবে। কারণ তারা সুযোগ পেলেই আবারো হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটাবে। মাইশার মতো মেধাবি মেয়ের নির্মম হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা সারাদেশবাসীকে নাড়া দিয়েছিলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি সারাদেশে সন্ত্রাসী হামলা আগুনে পুড়ে শিকার হওয়ার স্বজন ও আহতদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের সহযোগিতা করেছেন। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি জামায়াত তারা সেই আগুন সন্ত্রাসীরা নতুন করে ষড়যন্ত্র নেমেছে। ঔসব পরাজিত শক্তি যারা দেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি, জাতির পিতাকে মেনে নেয়নি এবং লাল সবুজের পতাকাকে মেনে নেয়নি। তারা আবারো নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশেকে অস্থিতিশীল করার জাল বুনছে। দেশবাসীর কাছে আবেদন আপনারা সজাগ থাকবেন। সরকারও সজাগ রয়েছে। যেকোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরকার জনগণ মিলে ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

এসময় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন যশোরের স্থানীয় বিভাগের উপ পরিচালক হুসেইন শওকতসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

এদিকে, রাজনীতির পেট্রোলবোমায় চোখের সামনে স্বামী আর সন্তানের এমন মৃত্যুর ৮ বছরেরও সেই দৃশ্য ভুলতে পারেন না পাপলুর স্ত্রী মাফরুহা বেগম। এখনো ঘুমরে ঘুমরে কেঁদে উঠেন রাতের আধারে। সন্তান আর একমাত্র উপার্জনক্রম ব্যক্তি স্বামীকে হারিয়ে ছোট ছেলে আসিফ ইমতিয়াজ জামানকে নিয়েই বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। স্বপরিবারে যেই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ঘুরতে যেয়ে তার জীবনে এমন আঁধার নেমে এসেছিলো সেই সমুদ্র সৈকত ট্যুরের বিভিন্ন ছবি দেখাচ্ছিলেন। একই সাথে প্রতিটি ছবি দৃশ্য ধারণের আগে স্বামী পাপলু আর মেয়ে মাইশার স্মৃতিচারণ করছিলেন আর বারবার নিজ ওড়না দিয়ে নিজের চোখের জল মুছছিলেন।

তিনি বলেন, স্বামী সন্তানকে হারিয়ে তার সংসার চালানোই কষ্টকর হয়েছিলো। ঘটনার পরে সরকার দ্বিতীয় দফায় ১২ লাখ টাকা দিয়েছিলো। আর ঘরভাড়ার টাকার দিয়েই আমাদের এখন সংসার চলে।

ছেলের লেখাপড়া শেষ হয়েছে কয়েক মাস। সে এখন একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করছে। বেঁচে যাওয়া একমাত্র সন্তান ইমতিয়াজকেই নিয়েই এখন বাঁচার ইচ্ছা। একই সাথে তার মতো আর অন্যকোনো পরিবারে পেট্রোল বোমার হামলার শিকারে সাজানো সংসার ভেঙ্গে চুরমার না হয় এমনটি কামনা করেন তিনি।

স্বাআলো/এসএ

.

Author
নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর