যশোরসহ দক্ষিণের ৬ জেলায় গম চাষ বৃদ্ধি, বাম্পার ফলনের আশা

যশোরসহ দক্ষিণের ছয় জেলায় আবার গমের সুদিন ফিরিয়ে। এক সময় ব্লাস্ট রোগে গম খেতের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় আবাদে নিরুৎসাহিত হয়েছিলেন চাষিরা। এখন ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী বারী গম-৩৩ জাতের গম চাষে ক্ষতির আশঙ্কা নেই। এছাড়া অন্যান্য ফসলের চেয়ে গমের দাম বা আটার দাম বেশি হওয়ায় আবাদে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।

কৃষি অফিস মতে, ২০১৫-১৬ মৌসুমে বৃহত্তর যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ৬ জেলায় (কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, মাগুরা ও ঝিনাইদহ) গম খেতে মহামারী আকার ধারণ করে ছত্রাকজনিত রোগ ব্লাস্ট। পরের মৌসুমে এসব জেলায় গম চাষের নিষেধাজ্ঞা দেয় কৃষি সপ্রসারণ অধিদফতর। কিছু কৃষক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গম চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এরপর গম চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন চাষিরা। এরপর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ব্লাস্ট রোগপ্রতিরোধী ‘বারি গম-৩৩’ জাত উদ্ভাবন করে। ২০১৭ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড গমের এ জাতটি চাষের অনুমোদন দেয়। এরপর থেকে আবারো গম আবাদ শুরু করেন চাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্য মতে, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর এ কার্যালয়ের আওতায়। চলতি মৌসুমে এই ছয় জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩৪ হাজার ৩৩৯ হেক্টর জমিতে। চাষ হয়েছে ৩৮ হাজার ৪৪৩ হেক্টর জমিতে। আগের মৌসুমে আবাদ হয়েছিল ৩২ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে।

চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গমের আবাদ হয়েছে কুষ্টিয়া জেলায়। সেখানে ১৩ হাজার ৬৫৪ হেক্টর জমিতে চাষ করেছেন কৃষকরা। এছাড়া মেহেরপুরে ১২ হাজার ৭৭৫ হেক্টর, চুয়াডাঙ্গায় এক হাজার সাত হেক্টর, মাগুরায় পাঁচ হাজার ২১০ হেক্টর, ঝিনাইদহে পাঁচ হাজার ১৭৩ হেক্টর ও যশোরে ৬২৪ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।

যশোর সদরের ভায়না রাজপুর গ্রামের আবদুস সাত্তার জানান, তিনি এবার দুই বিঘা জমিতে গমের আবাদ করেছেন। বর্তমানে বাজারে আটার দাম অনেক বেড়েছে। যে কারণে ভালো দামের আশায় গমের আবাদ করেছি।

চৌগাছার জগদীশপুরের আনিছুর রহমান বলেন, তাদের গ্রামের অনেকে গমের আবাদ করেছেন। তিনি ২০ শতক জমিতে চাষ করেছেন। বাজারে গম বা আটার চাহিদা ও দাম বাড়ার কারণে এবার আবাদ করেছি। ইতিমধ্যে গমের শীষ বের হয়েছে। আবহাওয়া ভালো গেলে ফলনও ভালো পাবেন বলে তিনি আশা করছেন।

শহরের বড় বাজারের মুদি দোকানি আশীষ রায় বলেন, প্রতিকেজি আটা ৭০ টাকায় বিক্রি করছি। বাজারে চালের চেয়ে আটার দাম বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রতি বিঘা জমিতে ১২-১৩ মণ গম উৎপাদন হয়। গত সপ্তাহে প্রতি মণ গম বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৩০০ টাকা। বর্তমানে ডায়াবেটিকসের কারণে অনেকেই একবেলা রুটি খেয়ে থাকেন।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, চাষিরা যে ফসলের দাম বেশি পান, সেই ফসলে তারা ঝুঁকে পড়েন। বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গম আমদানি হচ্ছে না। তাই বাজারে আটার দাম অনেক বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, সরকার থেকে কৃষকদের গমের বীজ দেয়া হয়। এখন ব্লাস্ট রোগের ভয় নেই। আবার গমের দামও ভাল। এজন্য চাষিরা গমের আবাদে ঝুঁকছেন।

স্বাআলো/এসএস

.

Author
রুহুল আমিন, যশোর: