
সরকারি অফিসে বসে মাদক গ্রহণ ও সেবনের ভিডিও ভাইরাল হলে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মিরুর বিরুদ্ধে বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঘটনা তদন্তে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদে আসেন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম। দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই তিনি হাতীবান্ধা গিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন।
এ সময় তিনি ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মিরু, মাদক কারবারি ইউসুফসহ উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে কথা বলেছেন।
অনুসন্ধানে পাওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ভাইস চেয়ারম্যান মিরু এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক কারবারির কাছ থেকে ফেনসিডিলের বোতল অফিসের চেয়ার থেকে উঠে নিজের পকেটে নিচ্ছেন।
জানা গেছে, হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের নতুন ভবনের নিচতলায় ভাইস চেয়ারম্যান মিরুর অফিস কক্ষ। ওই ভবনেই বসেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ অন্য দপ্তরের কর্মকর্তারা। ফেনসিডিলের মতো মাদক নিয়ে নির্দিষ্ট সরবরাহকারী সরাসরি ওই ভবনে থাকা ভাইস চেয়ারম্যানের কক্ষে গিয়ে দীর্ঘ সময় বসে থাকেন। পরে ওই অফিসে লোক থাকায় মাদক কারবারির কাছে গিয়ে পকেটে ফেনসিডিলের বোতলটি নেন তিনি।
মোবাইলে ধারণ করা দুই মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, আনোয়ার হোসেন মিরু নিজের চেয়ার থেকে উঠে টয়লেটে প্রবেশ করেন। টেবিলের অন্য প্রান্তে তখন একজন পুরুষ ও একজন নারী বসে ছিলেন। টয়লেট থেকে বের হয়ে তিনি সোজা চলে যান টেবিল থেকে কিছুটা দূরে সোফার কাছে সেখানে বসা লুঙ্গি পরিহিত এক ব্যক্তির সামনে। কিছু সময় পর লুঙ্গির ভাঁজে লুকিয়ে রাখা একটি ফেনসিডিলের বোতল মিরুর হাতে তুলে দেন ওই ব্যক্তি। মিরু কিছুটা আড়াল করে সেই বোতল নিয়ে আবারও ঢুকে পড়েন টয়লেটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাইস চেয়ারম্যান মিরুকে যিনি ফেনসিডিলের বোতল দিয়েছেন তিনি উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের কানিপাড়া গ্রামের জাফর আলীর ছেলে ইউসুফ (৪২)। যার নামে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে তদন্তের পর উপজেলা পরিষদ থেকে বের হলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জব্বাবে মাদক কারবারি ইউসুফ বলেন, তদন্তের জন্য আমাকে ডাকা হয়েছে। বোতলে কী দিয়েছিলাম জানতে চাইলে আমি বলেছি, সেই বোতলে মিরুকে মধু দিয়েছি। আর আমার নামে থানায় কোনো মামলা নেই।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মিরু সাংবাদিকদের বলেন, না, আমি মাদক নেইনি। ইউসুফ (মাদক সরবরাহকারী) আমার বন্ধু। তার কাছে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণে আয়ুর্বেধিক ওষুধ নিয়েছি। যেটি সমাজের অনেক মানুষ জানলে খারাপ চোখে নেবে তাই সেটি তার কাছে গোপনে নিয়েছি।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে শেষে বলা যাবে তিনি মাদক নিয়েছিরো কিনা না। যেহেতু ভাইস চেয়ারম্যানরা উপজেলা চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে সেহেতু তার অপরাধ প্রমাণিত হলে উপজেলা চেয়ারম্যান ব্যবস্থা নেবেন।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মামুন বলেন, ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখার পরেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। যদি প্রমাণিত হয় অব্যশই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বাআলো/এসএ
.
জেলা প্রতিনিধি, লালমনিরহাট
