ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ, এলো ৪৫ কোচ

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ চলছে। নতুন এ রেলপথে চলবে ১০০ কোচ। এর মধ্যে ৪৫টি নতুন কোচ চীন থেকে চলে এসেছে। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৭০ দশমিক ৫০ ভাগ।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প সূত্র বলছে, বাকি ৫৫টি কোচ তিন মাসের (মার্চ, এপ্রিল ও মে) মধ্যে ধাপে ধাপে আসবে। তবে কোচ কেনা হলেও প্রকল্পে কোনো লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) কেনা হয়নি। কোচগুলো চালানো হবে অন্য প্রকল্পের ইঞ্জিন দিয়ে।

কোচগুলো এখন রেলওয়ের সৈয়দপুর ও পাহাড়তলী কারখানায় রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সৈয়দপুর কারখানায় ২০টি কোচ ও পাহাড়তলীতে ২৫টি কোচ রাখা হয়েছে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী (ট্র্যাক অ্যান্ড ওয়ার্কস) আবদুল জলিল বলেন, সবশেষ গত ১ ফেব্রুয়ারি চায়না থেকে তৃতীয় চালানে ১০টি কোচ আনা হয়েছে। এর মধ্যে এসি বেড কোচ দুটি, এসি কোচ চারটি, নন-এসি কোচ দুটি ও শোভন কোচ কাম পাওয়ার কার দুটি আনা হয়েছে বাংলাদেশে।

তিনি আরো জানান, এর আগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর প্রথম চালানে আসে ১৫টি কোচ। পরের মাসের ১১ তারিখে দ্বিতীয় চালানে আসে ২০টি কোচ।

প্রকৌশলী আবদুল জলিল জানান, নতুন ব্রডগেজ রেলপথে যাত্রীরা ঝাঁকুনি ছাড়াই ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলবেন। উন্নত প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ ব্যবহারের কারণে যাত্রী ভ্রমণ হবে আরামদায়ক। রেলের ফিনিশড বডি প্রস্তুত হয়েছে চীনে, কিন্তু কোচগুলোর কিছু যন্ত্রাংশ এসেছে ইউরোপ থেকে। কোচের বগি এসেছে জার্মানি থেকে। এ ছাড়া হুইল, এয়ার ব্রেক, জেনারেটর এবং বগির ফিটিংসগুলো এসেছে জার্মানি ও রোমানিয়া থেকে।

প্রতিটি এসি কোচে ৮০টি সিট এবং নন-এসিতে ৯২টি সিট থাকবে। সব সিটের পাশে থাকবে চার্জিং পোর্ট। সবগুলো কোচ বায়োটয়লেট যুক্ত (মানব বর্জ্য জমা হওয়ার জন্য গণপরিবহনের টয়লেটের সঙ্গে আলাদা ট্যাংক)। ট্যাংকে পানি আছে কি না তা দেখার জন্য টয়লেটের ভেতরে একটি মিটার থাকছে। প্রতিটি কোচেই দুই সাইডে দুটি সিসিটিভি ক্যামেরা থাকছে। যেগুলো গার্ডব্রেক থেকে মনিটর করা হবে। প্রতিটি কোচেই থাকবে স্লাইডিং ডোর।

পদ্মা বহুমুখী সেতুর ওপর ৬ দশমিক ১ কিলোমিটারসহ মোট ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন প্রকল্প ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।

সম্প্রতি এ প্রকল্পের পদ্মা সেতু অংশের কাজ পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এ সময় তিনি জানান, এ বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের ঠিকাদার চীনের চায়না রেলওয়ে গ্রুপ। পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড।

নতুন ব্রডগেজ রেললাইনটি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে কেরানীগঞ্জ, শ্রীনগর, মাওয়া, পদ্মা সেতু, জাজিরা, ভাঙ্গা, কাশিয়ানী, নড়াইল, জামদিয়া পর্যন্ত যাওয়ার পর এর একটি শাখা যশোরের রূপদিয়া পর্যন্ত, অন্যটি খুলনার সিংগিয়া রেলস্টেশনে যুক্ত হবে।

নির্মাণাধীন এই রেলপথে ২৩ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ২৭৪টি মাইনর ব্রিজ ও কালভার্ট, ৩০টি লেভেল ক্রসিং, ১৩১টি আন্ডারপাস, ৫৮টি মেজর ব্রিজ এবং ২০টি আধুনিক স্টেশন থাকছে।

প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৭০ দশমিক ৫০ ভাগ। এর মধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার অংশে ৭০ ভাগ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটারে ৮৮ দশমিক ৫০ ভাগ ও ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৮৬ কিলোামিটারে ৮৮ দশমিক ৫০ ভাগ এগিয়েছে।

পদ্মা সেতুর ওপর ব্যালাস্টবিহীন ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার ট্র্যাকের নির্মাণকাজ এগিয়েছে ৫৪ দশমিক ৫২ ভাগ।

স্বাআলো/এসএ