২৮ দিনে সড়কে ঝরলো ৫২২ জনের প্রাণ

২৮ দিনের ফেব্রুয়ারি মাসে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৫০৭টি দুর্ঘটনায় ৫২২ জন নিহত এবং ৭৯৫ জন আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

এতে বলা হয়, দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ-পথে দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ফেব্রুয়ারিতে ৪৪৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৬১ জন। একই সময়ে রেলপথে ৪৬টি দুর্ঘটনায় ৩৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাত জন। নৌ-পথে ১৪টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৭ জন আহত। এছাড়াও নিখোঁজ রয়েছন ১৫ জন। এ মাসেই ১৫৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৫৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮২ জন আহত।

সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১৭২ জন চালক, ৯৩ জন পথচারী, ৩৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬২ জন শিক্ষার্থী, ১৪ জন শিক্ষক, ৫ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯৪ জন নারী, ৬৭ জন শিশু, একজন সাংবাদিক, একজন আইনজীবী ও একজন প্রকৌশলী এবং নয়জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। যার মধ্যে নিহত হয়েছেন তিনজন পুলিশ সদস্য, দুই সেনাবাহিনীর সদস্য, ১৩৩ জন চালক, ৮৬ জন পথচারী, ৫২ জন নারী, ৪৪ জন শিশু, ৫০ জন শিক্ষার্থী, ২৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ১১ জন শিক্ষক, একজন প্রকৌশলী, একজন আইনজীবী ও নয়জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

এ সময়ে সংগঠিত দুর্ঘটনায় ৫৯৮টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ বাস, ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস, ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১২ দশমিক ৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৮ দশমিক ২ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫৭ দশমিক ৭১ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৯ দশমিক ১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৮ দশমিক ৫ শতাংশ বিবিধ কারনে, শূণ্য দশমিক ২২ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেছিয়ে এবং শন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে সংগঠিত দুর্ঘটনার ৩১ দশমিক ৯৯ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২১ দশমিক ৭০ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩৮ দশমিক ৯২ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ২ দশমিক ২৩ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও শূন্য দশমিক ৮৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি সংগঠিত হয়েছে গত ৭ ফেব্রুয়ারি, এই দিনে ২৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়েছে। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ১৮ ফেব্রুয়ারি। এই দিনে ৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছে।

বেশ কয়েকটি কারণে সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। এগুলোর মধ্যে- বেপরোয়া গতি, বিপদজনক অভারটেকিং, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা ও বেপরোয়া মনোভাব, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ ও ট্রাফিক আইন অমান্য করা, ছোট যানবাহনের ব্যাপক বৃদ্ধি, রাস্তার পাশে হাট-বাজার, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো, চালকের নিয়োগ ও কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট না থাকা, দেশব্যাপী নিরাপদ ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে নসিমন-ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়ার কারনে সড়কে দুর্ঘটনা ক্রমবর্ধমান।

স্বাআলো/এসএ

.

Author
ঢাকা অফিস