এসএমএ রোগে বছরে ৩০ হাজার শিশু মারা যাচ্ছে

স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (এসএমএ) নামক বিরল রোগে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার শিশু মারা যাচ্ছে। শনাক্ত করতে একটি জেনেটিক ল্যাব দরকার যেটি প্রায় দুই কোটি টাকা হলেই প্রতিষ্ঠা করা যায়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এসএমএ শনাক্ত করার ব্যবস্থা আছে। গবেষণাও রয়েছে ঐ দেশটিতে।

জেনেটিক যত রোগ আছে তার সবগুলো শনাক্তকরণের ব্যবস্থা ভারতে রয়েছে। এটা পরীক্ষা করতে ২০ হাজার টাকা লাগে। তবে পরীক্ষা না করালেও কিছু উপসর্গ দেখে এই রোগ সম্পর্কে চিকিৎসকরা ধারণা করতে পারেন। বিরল এই রোগে আক্রান্তরা জন্মের দুই বছরের মধ্যে মারা যায়। তবে একটি ইনজেকশন দিতে পারলে এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের বাঁচানো সম্ভব। তবে ঐ একটি ইনজেকশনেরই মূল্য ২২ কোটি টাকা। বিশ্বে এ পর্যন্ত দুই হাজার ৩০০ শিশুকে দেয়া হয়েছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের এই ইনজেকশন। যার মধ্যে একজন মারা গেছে। এসএমএ রোগের ইনজেকশন আবিষ্কার করেছে সুইজারল্যান্ডের কোম্পানি নোভার্টিজ। এটা যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ কর্তৃক অনুমোদিত। দীর্ঘদিন গবেষণার পর এ ওষুধটি আবিষ্কার করা হয়েছে।

দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, বিশ্বে জেনেটিক রোগে আক্রান্ত হয়ে যেসব বাচ্চা মারা যায় এসএমএ তার শীর্ষে। বিরল এসএমএ রোগ শনাক্তকরণে দেশে জরুরি ভিত্তিতে একটি জেনেটিক ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। তাহলে সামর্থ্যবানরা ইনজেকশনটি ক্রয়ের প্রস্তুতি নিতে পারবে। এমনকি জেনেটিক ল্যাব থাকলে মায়ের পেটে থাকাবস্থায় কোনো শিশু বিরল রোগে আক্রান্ত কিনা তা শনাক্ত করা যেতো।

এসএমএ একটি জটিল জিনগত রোগ। এই রোগে আক্রান্ত শিশুরা বসতে বা দাঁড়াতে পারে না। তবে তাদের বুদ্ধি সাধারণ বাচ্চাদের চেয়ে বেশি থাকে। কিন্তু শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও জটিলতার কারণে এসব শিশু চিকিৎসা না পেলে জন্মের দুই বছরের মধ্যে মারা যায়। এটা একটি জেনেটিক ডিসঅর্ডার, যেটি মূলত মোটর নিউরণ সংলগ্ন স্নায়ুগুলোকে অক্ষম করে দেয়, ফলে এসব স্নায়ু নিয়ন্ত্রিত মাংসপেশিগুলো তাদের কর্মক্ষমতা হারায়। সাধারণত শরীরে যেসব মাংসপেশি শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে, খাবার খেতে, বসার সক্ষমতায়, হামাগুড়ি দেয়ার ক্ষেত্রে এবং সর্বোপরি হাঁটতে পারার জন্য কার্যকরি, এসএমএ আক্রান্ত হলে সেসব পেশি দুর্বল হয়ে যেতে যেতে এক সময় পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে যায়। ভারতে প্রতি ৬ থেকে ১০ হাজার শিশুর মধ্যে একটি শিশু এসএমএ আক্রান্ত হয়ে জন্মায়। বাংলাদেশে এই বিরল এসএমএ রোগের জন্মের হার আরো বেশি হবে বলে চিকিৎসকরা আশঙ্কা করছেন। ২০১৭ সালে দেশে প্রথম এসএমএ রোগে আক্রান্ত শিশু শনাক্ত হয়। ধনী-গরিব সব পরিবারের শিশুরাই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। দেশে কোনো কোনো পরিবারের তিনজন শিশু এই বিরল রোগে আক্রান্ত। দেশে এ পর্যন্ত এসএমএ আক্রান্ত ৬০ থেকে ৭০টি শিশু শনাক্ত হয়েছে। দেশে যেহেতু রোগ শনাক্তের জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, তাই বিদেশে নমুনা পাঠাতে হয়। অনেকে পরীক্ষা করানোর টাকা জোগাড় ও শনাক্ত করতে করতেই দুই বছর পার করে ফেলেন। এ সময়ের মধ্যে শিশুটি মারা যায়। এসএমএ টাইপ-১ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং মারা যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। তবে রোগটি দ্রুত শনাক্ত করা গেলে ফিজিক্যাল থেরাপিসহ প্রাথমিক চিকিৎসা করা যায়।

স্বাআলো/এস

.

Author
ঢাকা অফিস