গরু চুরির অভিযোগ তুলে হত্যার ঘটনা সভ্যতা বর্জিত

মাগুরার মহম্মদপুরে গরু চুরির অপবাদে আরিফুল ইসলাম মোল্লা (৩০) নামের এক দিনমজুরকে কুপিয়ে হত্যারা ঘটনা ঘটেছে। ১৬ মার্চ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার চর কালিশংকরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতের স্ত্রী রাশেদা বেগম জানান, জমিজমা নিয়ে গ্রামের এক প্রভাবশালীর সঙ্গে তার স্বামীর বিরোধ চলছিলো। এর মধ্যে তিনদিন আগে ওই প্রভাবশালীর গোয়াল থেকে একটি গরু চুরি হয়। এই ঘটনায় আরিফুলের বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগ আনা হয়। ১৫ মার্চ সন্ধ্যায় এ ঘটনায় সালিশ হয়। তখন দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ১৬ মার্চ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আরিফুল মাছ ধরে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় ৪-৫ জন ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কোপায়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে আরিফের তিন ভাইসহ কয়েকজন এগিয়ে এলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়।

নিহত আরিফুল যে পেশাদার গরু চোর তার আর কোনো প্রমাণ নেই। তারপরও তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। আইন হাতে তুলে নেয়ার এ বিষয়টিকে আমরা যেমন সমর্থন করিনে।

একটি উদ্বেগজনক বিষয় হলো, বিভিন্ন স্থানে চুরির অভিযোগে সন্দেহ করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। বর্তমান সময়ে একটি গরু চুরি হওয়া মানে একজনের কমপক্ষে এক লাখ টাকার ক্ষতি হওয়া। গ্রামের সাধারণ মানুষের এক লাখ টাকার ক্ষতি যে কতো বড় ক্ষতি তা ভুক্তভোগী ছাড়া আর কেউ অনুধাবন করতে পারবে না। কয়েক স্তরে গ্রামের মানুষ গরু পালন করে। কেউ হালের গরু হিসেবে পালন করে। কেউ মোটাতাজাকরণ কর্মসূচি হিসেবে করে, আবার কেউ ডেইরি ফার্ম হিসেবে পালন করে। এক কথায় গরু গ্রামের মানুষের বেঁচে থাকার বড় অবলম্বন। আর এই অবলম্বন প্রতিপালনের জন্য পালককে উদয়াস্ত পরিশ্রম করতে হয়।

আমরা উদ্বেগের সাথে বলতে চাই, গরু চুরিসহ বিভিন্ন ধরনের চুরি বাড়লেও প্রশাসন নাকে তেল দিয়ে ঘুমায় কি করে? যাদের সম্পদ লুট হচ্ছে তারা কি আর্থিকভাবে সুস্থ আছেন? প্রশাসন কি একটিবারের জন্য খোঁজ নিয়েছে? গ্রামের চাষাভুষা মানুষের সম্পদ চুরি হচ্ছে তার আবার খোঁজই বা নিতে হবে কি, আর চুরি প্রতিরোধে ব্যবস্থাই বা নিতে হবে কি? আজ মহম্মদপুরে যে ঘটনাটি ঘটলো তা কিন্তু ঘটতে পারতো না যদি প্রশাসন সময় মতো ব্যবস্থা নিতো। এটি যে প্রশাসনের ব্যর্থতা তাতে কি সন্দেহ করার কোনো কারণ থাকতে পারে।

এ কথা সত্য যে যখন আইনের শাসন থাকে না তখন বেআইনী কাজ ঘটে। আমরা বলবো মানুষের অশান্তির ঘটনা গ্রাম বা যেখানেই ঘটুক প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলে আইন হাতে তুলে নেয়ার মতো ঘটবে না বলে আমরা মনে করি।

স্বাআলো/এস

.