
২০২১ সালে তিনদিন ধরে গভীর সমুদ্রে ভাসছিলেন ১৭ জেলে। ট্রলারের ইঞ্জিন ঠিক করতে চেষ্টার কমতি ছিলো না। কিছুতেই কাজ হয়নি। শেষ হয়ে গিয়েছিলো খাবার। ছিলো না মোবাইলের নেটওয়ার্ক। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে সাগরে ভাসতে ভাসতেও হাল ছেড়ে দেননি জেলেরা। পাল তুলে হাল ধরে মোবাইল নেটওয়ার্কের মধ্যে আসার চেষ্টা করেন। এরপর সাগরে ভাসতে ভাসতে মাস্টার আব্দুর রহমান হঠাৎ দেখতে পান মোবাইলে নেটওয়ার্ক এসেছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করেন। কিন্তু ঠিকমতো বলতে পারছিলেন না সমুদ্রের কোনো জায়গায় আছেন তারা।
পরে ৯৯৯ থেকে জরুরি উদ্ধারের কল পেয়ে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া থেকে সাগরপথে আনুমানিক পাঁচ মাইল দূরে মাঝ সমুদ্র থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ‘অনুসন্ধান’ ১৭ জন জেলেকে উদ্ধার করে।
বন-জঙ্গল কিংবা গভীর সমুদ্রে পথ হারালে এভাবে নিজেদের সঠিক অবস্থান বলতে পারতেন না সেবাপ্রার্থীরা। কিছু ক্ষেত্রে নিজেদের পরিচয় জানাতেও চলে যেতো অনেকটা সময়। এসবের মধ্যে অযাচিত কিছু ফোন কলের ঝক্কিও সামলাতে হতো ৯৯৯ কর্তৃপক্ষকে। এসব সমস্যা সমাধানে চালু হচ্ছে ‘কলার লোকেশন ট্র্যাকার’। নাম-ঠিকানা-অবস্থান না বলতে পারলেও জাতীয় সেবা দেয়া এ কর্তৃপক্ষ সহজে পৌঁছে যাবে সেবাপ্রত্যাশীর কাছে।
‘কলার লোকেশন ট্র্যাকার’ সংক্রান্ত অসংখ্য বিড়ম্বনার মধ্যে আরো একটি ঘটে কক্সবাজারে। কক্সবাজারের ছেলে অভীক পাল ও তার তিন বন্ধু যখন হিমছড়ির দিকে যাত্রা শুরু করেন, ঘড়িতে তখন সকাল ৭টা। সোজা পথে না গিয়ে পাহাড়ি পথ ধরে যাবেন এমনটাই ইচ্ছা। কিন্তু অ্যাডভেঞ্চারের শেষটা যে এমন হবে কে জানতো? শেষ পর্যন্ত অভীক ও তার তিন বন্ধু সাইমুম আলম রাফসান, মিজবাহ ও আবির শাহ বাড়ি ফিরতে পেরেছিলেন। তবে তাদের ৯৯৯-এর সহায়তা নিতে হয়। শুধু তাই নয়, দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় ৯৯৯-কে ঠিকমতো লোকেশন দিতে পারছিলেন না তারা। এরপর তাদের উদ্ধারে উড়ে যায় বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার।
২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কলার লোকেশন ট্র্যাকার না থাকায় ৯৯৯-এ ফোন করলে গ্রাহককে তার নাম-ঠিকানা বলতে হতো। গভীর রাতে মহাসড়কে দুর্ঘটনায় পড়লে, গভীর সমুদ্রে নৌযান চলে গেলে অথবা ঘুরতে গিয়ে পথ হারিয়ে গহীন অরণ্যে হারিয়ে গেলে সঠিক লোকেশন কেউ বলতে পারতো না। এতে ৯৯৯ কর্তৃপক্ষকে সেবা দিতে বেগ পেতে হতো।
এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ৯৯৯-এ যুক্ত হচ্ছে কলার লোকেশন ট্র্যাকার। গ্রাহকের লোকেশন ও পরিচিতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাবে ৯৯৯ সংশ্লিষ্টদের কাছে। সময় নিয়ে গ্রাহকের নাম-ঠিকানা বলা লাগবে না। এতে যেমন গ্রাহকের সময় বাঁচবে, অন্যদিকে আরো দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেবা দিতে পারবে ৯৯৯। এছাড়া বিরক্তিকর কল এড়াতেও কলার লোকেশন ট্র্যাকার কাজে আসবে।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ বলেন, ৯৯৯-এর প্রতি জনগণের আস্থা বেড়েই চলছে। মানুষ যখনই বিপদে পড়ে তখনই ৯৯৯-এ ফোন দিচ্ছে। আমাদের দক্ষ কর্মী বাহিনী নিরলস পরিশ্রম করে জনগণকে সেবাটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। আমাদের অটোকলার সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। এতে সত্যিকারের ভুক্তভোগীদের আরো দ্রুত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ তাদের বিপদের মুহূর্তে পুলিশসহ ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাচ্ছেন। শ্রেণি-পেশা ও সামাজিক অবস্থান, নির্বিশেষে নারী, শিশু, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীসহ সবাই পাচ্ছেন এ সেবা।
স্বাআলো/এস
.
ঢাকা অফিস
