ভূমিহীন মুক্ত হতে যাচ্ছে যশোরের ৩ উপজেলা, আজ ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে চতুর্থধাপে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে যশোরে জমিসহ ঘর পাচ্ছেন আরো ৩৩৩ ভূমিহীন পরিবার। এর মধ্যে ১৪০ পরিবারে জমিসহ ঘর হস্তান্তরের মাধ্যমে শতভাগ ভূমিহীনমুক্ত উপজেলা হতে যাচ্ছে জেলার শার্শা, বাঘারপাড়া ও কেশবপুর উপজেলা।

আজ বুধবার (২২ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেবেন।

এর আগে তিন ধাপে যশোরে ৮ উপজেলায় এক হাজার ৭৬১টি বাড়ি হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভূমিহীনমুক্ত হলেও এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোনো কারণে কোনো ভূমিহীন পাওয়া যায়, দ্রুততম সময়ে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সারাদেশে ভূমি ও গৃহহীনদের ঘরবাড়ি দিতে বদ্ধপরিকর বর্তমান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। এজন্য যেখানেই সরকারের খাস জমি রয়েছে, সেগুলো উদ্ধার করে করা হচ্ছে বাড়ি। আর যেসব জায়গায় পর্যাপ্ত জমি নেই, সেখানে কেনা হচ্ছে জমি। শুধু তাই নয়, প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে থাকা খাসজমি উদ্ধার করে আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণ করেছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন। এভাবে বিভিন্ন খাস জমি দখল করে যশোরে এক হাজার ৭৬১টি বাড়ি উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে ভূমিহীন ও অসহায়দের। এছাড়া আগামী ২২ মার্চ এই প্রকল্পের চতুর্থ ধাপে জেলায় ৩৩৩টি পরিবারের মধ্যে ভূমিসহ ঘর দেয়া হবে। এর মধ্যে কেশবপুরে ৪৫টি ঘর, শার্শায় ৪৬টি ও বাঘারপাড়ায় ৪৯টি জমিসহ ঘর দেয়া হবে। এই ১৪০টি পরিবারে ঘর দেওয়ার মধ্যে দিয়ে তিনটি উপজেলা শতভাগ ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে যশোরের এ তিনটি উপজেলা শতভাগ ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত জেলা ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, বাকি ১৯৩টি ঘর পাঁচ উপজেলার ভূমিহীনদের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ উদ্যোগে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার দুই শতক জমির মালিকানাসহ টিনশেড পাকা ঘর পাচ্ছেন।

তমিজুল ইসলাম বলেন, কেউ ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না- এই সাহস বিশ্বে শুধু বাংলাদেশই দেখিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শুধু এই সাহসই দেখাননি বরং তিনি এটা করে দেখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু মানুষের মৌলিক প্রয়োজনগুলো মিটিয়ে বাংলাদেশকে একটি সুন্দর রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে চেয়েছিলেন। সেই পথ ধরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দুই শতক জমির মালিকানার সঙ্গে এই বাড়িতে থাকছে দুটি করে শোয়ার ঘর, একটি রান্নাঘর, একটি শৌচাগার, বারান্দা, বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির জন্য নলকূপ। প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, বিধবা, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীসহ অনেক গৃহহীন আছেন যারা এই ঘরগুলো পেয়েছেন। এটি আনন্দের বিষয়। আশ্রয়ণের ঘরে বসবাসের জন্য সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। তারা যেন উন্নত জীবনযাপন করতে পারেন। জেলা প্রশাসনের সবপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি বলে আনন্দিত।

কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি খাস জমি দখল করে রেখেছিলেন। সেই সব জমি দখল মুক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিভিন্ন গৃহহীন ও ভূমিহীনদের নতুন ঘর তৈরি করে দিয়েছি। সরকারপ্রধানের এমন উদ্যোগ এবং সরাসরি শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়াতে ইউএনওরা নিজ দায়িত্বে এই ঘর তৈরি কাজে জড়িত ছিলেন। ফলে ইউএনওদের এসব বাড়ির প্রতি অন্যরকম আবেগ জড়িত। গৃহহীনদের হাসি ফুটানোর কাজে সরাসরি জড়িত থাকতে পেরে আমি খুব আনন্দিত।

শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নারায়ন চন্দ্র পাল বলেন, শতভাগ ভূমি ও গৃহহীনতা থেকে মুক্ত হতে যাচ্ছে সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ মার্চ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ঘর ও জমি হস্তান্তর করবেন উপকারভোগীদের মধ্যে। এর মধ্য দিয়ে শতভাগ ভূমিহীন ও গৃহহীনতামুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হবে। উপকারভোগীরা এখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন।

স্বাআলো/এসএস

.

Author
নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর