
দেশটা যেন শনির দশায় ধরেছে। গত দুদিনে তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। প্রথম দিনের দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ১৯ মার্চ মাদারীপুরের শিবচরে। প্রত্যক্ষদর্শী এবং যাত্রীদের মধ্যে যারা বেঁচে আছেন তারা সবাই বলেছেন বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর ফলে বাসটি মূল রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ে দুমড়ে মুছড়ে যায়। এতে ১৯ যাত্রী নিহত হন। দ্বিতীয়দিন দুটি দুর্ঘটনা একটি ঘটে দিনাজপুরের দশমাইল-রংপুর মহাসড়কের সদরপুর দরবারপুরে। বিআরটিসি বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংর্ঘষে চালকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। ২০ মার্চ সন্ধ্যা পৌনে ৬টার সময় দিনাজপুরের দশমাইল-রংপুর মহাসড়কের সদরপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। একই দিন বান্দরবানের রুমা উপজেলায় দুটি মিনি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাহাড়ের খাদে পড়ে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এতে ১৬ জন আহত হয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কার্যকর করা ছাড়া উপায় নেই। পরপর দুদিনে দুর্ঘটনায় ২৮ জনের প্রাণহানির বিষয়টি উদ্বেজনক । দুর্ঘটনার বিষয়ে আর চুপ থাকার সুযোগ নেই। এর পরও যদি সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ নড়েচড়ে না বসে তাহলে জাতির কপালে দুর্ভোগ আছে।
দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রী যৌক্তিক কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে চালকরা মাদকাসক্ত কিনা তা নিশ্চিত হবার জন্য ডোপ টেস্ট অন্যতম। মাদকাসক্ত চালকরা বেহুঁশ হয়ে ওভারটেক করতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে। এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে অর্থাৎ সড়কে বেপরোয়া গতি ও অসুস্থ ওভারটেকিং বন্ধ করতে চালকদের ডোপ টেস্ট একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি সঠিক অনুধাবন করে স্বচ্ছতার সাথে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সাথে তিনি সড়কে গতিসীমা নির্ধারণে প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।
স্বজন হারানোর বেদনা কতটুকু তা যারা এ ব্যথায় ব্যথিত তারা ছাড়া আর কেউ অনুভব করতে পারবে না। যদি স্থানীয় জনতা উত্তেজনা বশত ওই ঘাতক বাসটি ভাঙচুর করে বসতো তাহলে পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতো। ভাঙচুরের অপরাধে পুলিশ মামলা করতো এলাকার সাধারণ নিরীহ মানুষের নামে। মানুষ খুন করেও পরিবহন শ্রমিকরা শেষমেষ পার পেয়ে যেত এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে হচ্ছেও তাই। ফ্রিস্টাইলে ঘটে চলেছে সব কিছু। এক একটি দুর্ঘটনা ঘটে আর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় অপরাধী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু সে ব্যবস্থা আর জনসাধারণ চোখে দেখে না। আমরা জানিনে আর কত প্রাণ এভাবে গেলে পরিবহন শ্রমিকরা নিয়ন্ত্রণে আসবে। বন্ধ হবে তাদের বেপরোয়া ভাব।
যানবহন চলাচলে কোনো নিয়ম নীতি মানতে দেখা যাচ্ছে না। মনে হয় যেন একটা ফ্রি স্টাইলের দেশে যানবাহনগুলো চলাচল করছে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। দেশটাকে সঠিক পথে চলতে হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। সড়কে মৃত্যু রোধ করতে হলে আইনের কাছে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
স্বাআলো/এসএস
.
