
যশোরের চৌগাছায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি ও ঘর পাওয়া ব্যক্তিদের কাছে নামজারির জন্য ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠেছে স্বরুপদাহ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে। এবিষয়ে মোবাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার না করেই জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন নাকি, যে টাকা (ঘুষ) চাওয়া যাবে না।
এ বিষয়ে জমি ও ঘর বরাদ্দ পাওয়া চৌগাছা পৌরসভার ভূমিহীন বাসিন্দা সম্রাট মোল্লা সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাসের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। পরে তার পরামর্শে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগের সাথে ওই ভূমি সহকারী কর্মকর্তার মোবাইল ফোন থেকে ঘুষ দাবি করার অডিও রেকর্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে দিয়েছেন সম্রাট।
লিখিত অভিযোগে সম্রাট বলেছেন, আমি ও আমার স্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি ও একটি ঘর পেয়েছি। গত ২০ মার্চ উপজেলা পরিষদে জমির দলিলে স্বাক্ষর দেয়ার জন্য আসলে নায়েব জাহাঙ্গীর (স্বরুপদাহ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা) আমাকে মোবাইলে কল করে তার ব্যবহৃত ০১৭১২৯২২১০৯ নম্বরে দ্রুত ২২০০ টাকা বিকাশ করে দিতে বলেন। এরপর আবারো ফোন করে টাকা দিয়েছি কিনা জানতে চান। তিনি বারবার আমার কাছে ফোন করে টাকা চাচ্ছেন, বলছেন জমির নাম পত্তনের জন্য টাকা লাগবে। অথচ এসিল্যান্ড স্যার আমাকে বলেছেন এ বিষয়ে কোন টাকা লাগবে না। আমি সুষ্ঠ বিচার দাবি করছি।’
সম্রাটের স্ত্রী আমেনা খাতুন বলেন, নায়েব বারবার ফোন করে টাকা চাচ্ছে। কোন কথা শুনতে চাচ্ছে না। আমরা এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
জমি ও ঘর পাওয়া অন্য উপকারভোগী ফুলসারা ইউনিয়নের সলুয়া গ্রামের খাদিজা খাতুনের স্বামীর কাছেও নায়েব (ইউনিয়ন ভূমিসহকারী কর্মকর্তা) জাহাঙ্গীর ২ হাজার ২০০ টাকা দাবি করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। বুধবার (২২ মার্চ) জমি ও ঘরের সার্টিফিকেট নিতে আসার সময় সকালেও নায়েব জাহাঙ্গীর খাদিজার স্বামীর মোবাইলে কল করে টাকা জোগাড় হয়েছে কিনা জানতে চান। খাদিজা বলেন, টাকা চাওয়ার পর আমরা আমাদের ইউনিয়নের নায়েবের কাছে যেয়ে বিষয়টি বলি। তিনি আমাদের বলেন, এই জমি ও ঘর পেতে কোন টাকা দিতে হবে না।’ পরে আমরা নায়েবকে (জাহাঙ্গীর) বলেছি আমাদের কাছে টাকা নেই। আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদ ভাই (উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরী) টাকা দেবে।’
একইভাবে নায়েব জাহাঙ্গীর মোবাইলে ফোন করে পৌরসভার ভূমিহীন ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর ঠান্ডু সর্দারের কাছে ২ হাজার ৫০০ টাকা দাবি করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। ঠান্ডু জানান, ফোন করে নায়েব সাহেব বলেন, ‘আমার নম্বরে বিকাশ করে ২ হাজার ৫০০ টাকা পাঠিয়ে দে।’
ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর আরেক বাসিন্দা শান্ত সর্দার বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য জমি ও ঘর দিয়েছেন। আমি আগে জমি ও ঘর পেয়েছি। কোন টাকা দিতে হয়নি। তাহলে এখন কেন নায়েবকে টাকা দিতে হবে? একই অভিযোগ করেছেন স্বরুপদাহ ইউনিয়নের মাশিলা ও খড়িঞ্চা গ্রামে আশ্রয়ণের জমি ও ঘর পাওয়া আরো কয়েকজন।
চৌগাছার সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ্বাস বলেন, মৌখিক অভিযোগ পেয়ে তাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। বিষয়টি ইউএনও এবং এডিসি (রাজস্ব) স্যারকে জানিয়েছি। স্যারদের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণের জমি ও ঘর পেতে কাউকে এক টাকাও দিতে হবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এবিষয়ে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য নায়েব জাহাঙ্গীর হোসেনের মোবাইলে কল করা হলে তিনি বলেন, পরে আর তাদের কাছে টাকা চাইনি। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, (তারা) প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছে নাকি যে, টাকা (ঘুষের) চাওয়া যাবে না।
স্বাআলো/এসএস
.

আজিজুর রহমান, চৌগাছা (যশোর)
