
শৈশবে শোনা যেতো সাপে কাটা রোগী ঝাড়ফুক করে বাঁচানো যায়। এমনই একটি কল্পিত কাহিনী নির্ভর ‘জরিনা’ নামে একটি কবিতা ওই সময় এত জনপ্রিয় ছিলো যে ফোল্ডার করা ৮ পৃষ্টার ওই কবিতাটি গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে পাওয়া যেতো। যারাই বাজার ঘাটে যেতো তারাই একটা কিনে আনতো। যারা পারতো তারা সুর করে পড়ত এবং তাকে ঘিরে নারী-পুরুষ মনযোগ সহকারে শুনতো সেই কবিতাটি। কবিতার মূল কথা ছিলো বেদের মেয়ে জরিনা ও তার দাদী ঝাড়ফুক করে জমিদারের সাপে কাটা মৃত ছেলেকে বাঁচিয়ে তুলেছিলো।
কিছু মানুষ বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার দিনেও সেই মান্ধাতার আমলে পড়ে আছে। আজো ঝাড়-ফুঁকে বিশ্বাস করে তারা। আর ওষুধ বলে শেকড় বাটা পাতা বাটাতো ব্যবহার হচ্ছেই। ফলে মানুষ ঠকেই যাচ্ছে। ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে সায়েদ আলী (৫৫) নামে এক ভণ্ড কবিরাজের অপচিকিৎসায় ঝলসে গেছে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর পিঠ। পৌরসভা এলাকার গুড়া গ্রামের বাসিন্দা সায়েদ আলী নামে এই ভণ্ড কবিরাজ দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে কবিরাজির নামে বিভিন্ন মানুষকে অপচিকিৎসা দিয়ে আসছে। ২২ মার্চ চুয়াডাঙ্গা জেলার কাউন্সিল পাড়ার আরিফুল ইসলাম তার মেয়েকে ‘জিনে ধরেছে’ ভেবে ওই কবিরাজের কাছে চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসে। প্রথমে ঝাড়ফুঁক, পানি পড়া দিয়ে কোনো প্রকার উন্নতি না দেখে ফুটন্ত পানি তার পিঠে ঢেলে দেয়। এতে ওই শিক্ষার্থীর পুরো পিঠ ঝলসে গেছে।
সায়েদ আলীর মতো ভণ্ড জিনের কবিরাজের বেসাতি চলছে গ্রাম-গ্রামান্তর জুড়ে। তাদের পাল্লায় পড়ে মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে, চিকিৎসা পায়নি। ভুক্তভোগীরা চিকিৎসা না পেলেও কেনো যে এসব প্রতারকদের ওপর ভরসা করছে তা ভেবেই পাওয়া যায় না।
দিন পাল্টেছে। কবি সুফিয়া কামাল বাস্তবতার সাথে মিল করে কবিতা লিখেছেন ‘আমরা যখন আকাশের তলে উড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি, তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি।’ এটাই বাস্তবতা। যে সময় আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিলো না তখন মানুষ সান্তনা পেতে অনেক কিছু করতো। কিন্তু এখন সে দিন আর নেই। কবি গুরু লিখেছিলেন, হে বঙ্গ জননী, সাত কোটি সন্তানকে রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করোনি। আসলে জাতি হিসেবে বাঙালি এক হুজুগে জাতি। নতুবা এক রাতে সারা দেশের মানুষ কঞ্চির পানি খায় কি করে?
জাতি হিসেবে আমাদেরকে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হলে কুসংস্কারমুক্ত হতে হবে, হতে হবে বাস্তববাদী। তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়নের যুগে সবাইকে প্রযুক্তিকে আকড়ে ধরতে হবে। মনে রাখতে হবে বিজ্ঞান বাদ দিয়ে কেউ এগোতে পাবে না।
স্বাআলো/এস
.
