
রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছাসহ বিভিন্ন স্থানে হঠাৎ ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এতে লন্ডভন্ড হয়েছে অনেক কয়েকটি গ্রাম। ঝড়ের স্থায়িত্ব কম হলেও কোথাও কোথাও বাতাসের বেগে ঘরবাড়ির ক্ষতির পাশাপাশি উড়ে গেছে স্থাপনা। এতে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপড়ে গেছে কয়েকশ’ গাছ। এছাড়া ঝোড়ো বাতাসে আম, লিচু, ভুট্টা, গম, ধানসহ উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় অর্ধশতাকি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে।
সোমবার (১৫ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রংপুরের ওপর দিয়ে কাল বৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। এতে এই ক্ষয়-ক্ষতি হয় বলে জানা গেছে।
এদিকে ঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ওইসব এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ বিঘ্ন ঘটছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরির্দশন করেছেন। তারা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর মহানগরীসহ পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের প্রতিপাল বগুড়াপাড়া, পরাণ, শালমারা, ব্রা²ণীকুন্ডা বাজার, ছাওলা, পারুল, ইটাকুমারি, কল্যাণী ও অন্নদানগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা, কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ, শহীদবাগ ও সারাই ইউনিয়ন এবং গঙ্গাচড়া উপজেলার উপজেলার কোলকোন্দ, লক্ষীটারী, গজঘন্টা, মর্ণেয়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নসহ রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় সোমবার রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে থেমে থেমে ঝড় ও ঝোড়ো হাওয়া বইতে থাকে। কোথাও শিলা বৃষ্টিও হয়। হঠাৎ হওয়া এই ঝড়ে ক্ষতির কাঁচা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়। পাশাপাশি উড়ে গেছে স্থাপনা। এতে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপড়ে গেছে কয়েকশ’ গাছ। এছাড়া ঝোড়ো বাতাসে আম, লিচু, পাট, ভুট্টা, গম, ধান, শাক-সবজিসহ উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কোথাও কোথাও বিদ্যুতের পিলার ভেঙ্গে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে।
পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের বগুড়াপাড়া গ্রামের লাইলি বেগম জানান, তার একটাই মাত্র ছোট থাকার ঘর। সেই ঘরটির উপরে ঝড়ের সময় গাছপালা ভেঙে পড়েছে। ভাগ্যক্রমে দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছেন। কিন্তু ঝড়ে তার ছোট দোকানটি উড়ে গেছে। এতে তার লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও এই উপজেলার অন্নদানগর, ইটাকুমারি, ছাওলা ও পারুল ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে।
কাউনিয়ার হারাগাছ ইউনিয়নের আব্দুল মমিন ও শহীদবাগ ইউনিয়নের প্রাণনাথ চরের আতিয়ার রহমান বলেন, ঝড়ে গাছ পড়ে তাদের টিনের চালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার এলাকাসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় কমপক্ষে অর্ধশতাধিকজনের ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুসা নাসের চৌধুরী জানান, তার উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে পারুল, ইটাকুমারী ও অন্নদা নগর ইউনিয়নে ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া অন্যান্য ইউনিয়নও ক্ষতি গ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় এক হাজারের বেশি ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকশ’ গাছ উপড়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করে তালিকা করা হচ্ছে।
কাউনিয়া উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনোনীতা দাস জানিয়েছেন, সোমবার রাতের ঝড়ে কাউনিয়া-রংপুর সড়কে বেশ কিছু গাছ ভেঙে পড়েছে। এসময় যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। কাউনিয়ার সারাই, শহীদবাদ ও হারাগাছ ইউনিয়নে ক্ষতি বেশি হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে বলা হয়েছে।
এব্যাপারে রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানিয়েছেন, কালবৈশাখী ঝড় নয় ৪৫ কিলোমিটার বেগে দমকা বাতাস বইছিল। বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার। এসময় বৃৃষ্টি হয়েছে মাত্র দুই মিলিমিটার বলেও তিনি জানান।
স্বাআলো/এসএস
.

হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর
