
বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার ভয়াবহ হতে যাচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। গত পাঁচ মাসের ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৮ মে পর্যন্ত যে সংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এর আগে কোনো বছরের প্রথম পাঁচ মাসে এমনটা দেখা যায়নি।
তথ্যমতে, ১৮ মে পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১২ জন। ২০০০ সালে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর থেকে প্রথম পাঁচ মাসে এতো মৃত্যু আর কখনো দেখেনি বাংলাদেশ।
শুধুমাত্র ঢাকাতেই নয়, দেশের অন্যান্য স্থানেও এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি অন্য সময়ের তুলনায় খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীও।
ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপের মাঝে ভিন্ন ভিন্ন ধরণে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা চিকিৎসকদের। একই আশঙ্কা প্রকাশ করে কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নিয়ে ভাবার চাইতেও বেশি জরুরি এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করা। এমনটা না হলে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে পুরো দেশজুড়েই।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ মে পর্যন্ত বাংলাদেশে এক হাজার ৩৫৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মাঝে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮১৮ জন। এর মাঝে সর্বোচ্চ ১৮২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এর মাঝে একজন মারা গেছেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৩২ জন রোগী চিকিৎসাধীন। এছাড়াও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সর্বোচ্চ চারজন ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুইজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন। ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মাঝে কাকরাইলের ইসলামি ব্যাংক হাসপাতালে একজন ও আজগর আলী হাসপাতালে একজন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
ঢাকা মহানগরীর বাইরে দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ৫৪১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত। এর মাঝে ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলা শহরগুলোতে ৮৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ২৫৮ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মাঝে মারা গেছেন তিনজন। ময়মনসিংহ বিভাগে এখন পর্যন্ত ১৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও কেউ মারা যায় নি। খুলনা বিভাগে এখন পর্যন্ত ৪২ জন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এছাড়া রাজশাহী বিভাগে সাতজন, রংপুর বিভাগে দুই জন, বরিশাল বিভাগে ১২৫ জন ও সিলেট বিভাগে চারজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে এসব বিভাগে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুম।
চলতি বছর জানুয়ারি মাস থেকেই হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। শুধু আক্রান্তই না, চলতি বছরের ১৮ মে পর্যন্ত ইতোমধ্যেই মারা গেছেন ১২ জন। ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু সংক্রমণ শনাক্তের পরে প্রথম পাঁচ মাসে এতো মৃত্যু কখনো দেখা যায় নি।
শুধুমাত্র ঢাকাতেই নয় বরং দেশের অন্যান্য স্থানেও চলতি বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে চিকিৎসা নিতে। ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য স্থানে ইতোমধ্যেই তিনজন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
১৮ মে পর্যন্ত দেশে এক হাজার ৩৫৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্তের তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম। ২০০০ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পরে প্রথম পাঁচ মাসে এটিই সর্বোচ্চ শনাক্তের তথ্য।
২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো ৩৫২ জন। তবে এই পাঁচ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায় নি। এ বছর জুন মাসে প্রথম ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও বছর শেষে ২৮১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এটি এক বছরে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ মৃত্যুর পরিসংখ্যান।
২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো ১০০ জন। তবে এই পাঁচ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায় নি।
২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩০৬ জন। তবে এই পাঁচ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায় নি।
স্বাআলো/এসএ
.
ঢাকা অফিস
