
‘রাখলে জীববৈচিত্র্য, থাকবে মাটি সক্রিয়’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পালিত হয়। এ মাটি দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আর মাত্র বছর ত্রিশেকের মধ্যে বাংলাদেশের ৬ কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হবে। ইটভাটা, রাস্তা ও ভবন নির্মাণ এবং পুকুর খননসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ক্রমাগত মাটির ওপরের স্তর নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া ভূগর্ভস্থ পানি ওঠানোর কারণে সাগরের নোনা পানি ওপরে উঠে আসছে। বাড়ছে লবণাক্ততা। এ কারণে উপকূলীয় এলাকার মানুষ ফসর ফলাতে পারছে না। বাড়ছে সিডর ও আইলার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়।
এমন আশঙ্কার কথাটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের । মাটি না থাকলে পৃথিবীর কোনো অস্তিত্ব থাকতো না। জীবনের সাথে মাটির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মাটি ছাড়া সভ্যতা টিকে থাকতে পারে না। মাটিবিহীন পৃথিবী মানুষের বাসযোগ্য হতো না। মাটির ওপর ভিত্তি করেই সব কিছুর অস্তিত্ব, উৎপত্তি ও বিকাশ। তাই মাটি দূষণ, মাটির ক্ষয়, অপব্যবহার রোধ করতে না পারলে তা হবে মানুষসহ সব জীবের প্রাণ ধারণের জন্য হুমকি স্বরূপ।
মাটির সবচেয়ে বড় শত্রু হলো সভ্যতা। সভ্যতার কারণে মাটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । পাহাড়, উপকূল, নদ-নদীর তলদেশসহ দেশের কোন এলাকায় মাটির কী কী সমস্যা রয়েছে তা চিহ্ণিত করে তা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। মাটিকে প্লাস্টিকের হাত থেকেও রক্ষা করতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে চরাঞ্চলে জেগে ওঠা নতুন জমিকে কাজে লাগিয়ে অনেক কৃষক তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন আনছেন। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় ধৈঞ্চা ও শিমুল গাছ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। মাটির মান বাড়াতে পরিবেশবান্ধব ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার বাড়াতে হবে।
গ্রাম্য প্রবাদে আছে ‘সময়ের এক ফোড় আর অসময়ের দশ ফোড়’। কথাটা অত্যন্ত যৌক্তিক। মাটি নিয়ে উচ্চবাচ্য কম হচ্ছে না। কিন্তু কেউ সাড়া দিচ্ছে না। ইটভাটায় আবাদি জমির টপ সয়েল কেটে নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও তা দেখার কেউ নেই। যদি টনক না নড়ে তবে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। গণমাধ্যমগুলো বহু আগে থেকে এ বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি করে আসছে। এখনো সময় আছে। তবে এখনই যদি ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে সেই প্রবাদ কথাটির মতো হবে। এখন ব্যবস্থা নিলে যে কাজটা এক ফোড়ে হবে, দেরি করলে তার জন্য ব্যয় করতে হবে দশ ফোড়। আমরা আশা করোব সরকার মাটির গুণাগুণ রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।
.
সম্পাদকীয় ডেস্ক
