
পাহাড়ের কাজুবাদাম এখন চাষ হচ্ছে সমতলভূমিতেই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের চেষ্টায় মাত্র এক বছরেই সার ও কীটনাশকবিহীন অর্থকরী ফসল কাজুবাদাম সমতল ভূমিতে উৎপাদিত হচ্ছে।
কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে ‘সমতলভূমিতে কাজুবাদাম ও কফি চাষ’ প্রকল্পের আওতায় কাজুবাদাম চাষে সফলতা পাওয়ায় এখন ব্যপক ভিত্তিতে বাণিজ্যিকভাবে কৃষকদের কাজুবাদাম চাষে উৎসাহ দেয়া হবে।
সহ-ফসল ও খেতের নিরাপত্তা বেড়া হিসেবে চাষে সফল হওয়ার পর মূল ফসল হিসেবে আগামী মৌসুমে কাজুবাদাম চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চাষি মাহবুবুর রহমান লিটন। মাহবুবুর রহমান যশোরের চৌগাছা উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের পাতিবিলা গ্রামের বাসিন্দা।
সরেজমিনে কথা হয় মাহবুবুর রহমানের সাথে। তিনি জানান, গাছগুলোর বয়স দুই বছর হয়েছে। দুই বছর আগে উপজেলা কৃষি অফিস হতে বিনামূল্যে গাছগুলো দেয়া হয় তাকে। বর্তমানে তার খেতে ৩৩টি কাজুবাদাম গাছ রয়েছে। যার প্রায় প্রতিটিতেই ফুল ও ফল এসেছে। এরমধ্যে একটি গাছে এখন পর্যন্ত যে ফল এসেছে তাতে ৫ থেকে ৬ কেজি বাদাম হবে বলে আশা করছেন তিনি। তিনি আরো জানান, এরইমধ্যে ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ করেছেন। তারা বলেছেন, বাদাম সংরক্ষণ করতে। তারা ১২শ টাকা কেজি দরে বাদাম কিনবেন।
মাহবুবুর রহমান জানান, কাজুবাদাম চাষে তার অতিরিক্ত কোনো সার, পানি বা কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়নি।
চৌগাছার পাতিবিলা কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুক্তার হোসেন বলেন, কাজুবাদাম মূলত পাহাড়ী ফসল। ‘সমতলভূমিতে কাজুবাদাম ও কফি চাষ’ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার দুইজন চাষীকে কাজুবাদাম গাছ দেয়া হয় ২০২১ সালের আগস্ট মাসে। এরপর বিপুল বৃষ্টিপাতে গাছগুলো নষ্ঠ হয়ে যায়। পরে উপজেলা কৃষি অফিসে থাকা ৩০টি কাজুবাদামের চারা দেয়া হয় পাতিবিলা গ্রামের চাষী মাহবুবুর রহমান লিটনকে। তিনি নিজের বাড়ি লাগোয়া দুই বিঘা পেয়ারা বাগানের চারপাশে সহ-ফসল বা নিরাপত্তা বেড়া হিসেবে গাছগুলো রোপণ করেন। গাছগুলোতে গত বছরই ফুল আসে। তবে চলতি মৌসুমে বেশ কয়েকটি গাছে কাজুবাদাম ফলেছে। কিছু ফলে পেকেও গেছে।
তিনি জানান, কাজুবাদামের জন্য আলাদা কোনো সার, পানি বা কীটনাশক ব্যবহার করা লাগেনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুবাশ্বির হুসাইন বলেন, পাহাড়ী ফসল কাজুবাদাম সমতলভূমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ‘সমতলভূমিতে কাজুবাদাম ও কফি চাষ’ প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালে যশোরের চৌগাছা ও ঝিকরগাছা উপজেলায় কাজুবাদামের গাছ প্রণোদনা হিসেবে দেয়া হয়। এতেই সফলতা এসেছে।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। এখন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সমতলভূমিতে কাজুবাদামের চাষ সম্প্রসারণ করবে। প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের গাছ প্রণোদনা দেয়া হবে। ব্যপক ভিত্তিতে বাণিজ্যিকভাবে তাদের কাজুবাদাম চাষে উৎসাহিত করা হবে।
কৃষিবিদ মুবাশ্বির হুসাইন বলেন, কাজুবাদামের ফল বোটার দিকে আপেলের মতো এক থেকে দুই ইঞ্চি লম্বা এবং প্রায় সমপরিমাণ প্রস্থের দেখতে হয়। যা পাকলে আপেলের মতো লাল রং ধারণ করে। এই অংশকে কাজু আপেলও বলা হয়ে থাকে। এই অংশ খেতে আপেলের মতোই স্বাদ। এছাড়া নিচের অংশে খোসাযুক্ত বাদাম হয়। এই অংশ আপেলের অংশ থেকে ছড়িয়ে পাঁচ ছয়দিন রৌদ্রে শুকাতে হয়। এরপর এটি খোসা ছড়িয়ে বাদাম সংগ্রহ করতে হয়।
তিনি বলেন, এটি বেশ দামি ফসল। বর্তমানে বাজারে এক হাজার থেকে ১২শ টাকা কেজিতে কাজুবাদাম বিক্রি হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা সম্ভব হলে এটি স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে রফতানি করা যেতে পারে।
স্বাআলো/এসএ
.

আজিজুর রহমান, চৌগাছা (যশোর)
