যেভাবে করবেন ড্রাইভিং লাইসেন্স, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও খরচ

শুধুমাত্র যেকোনো ধরনের মোটর গাড়ির চালানোর স্বীকৃতি স্বরূপ অনুমতিপত্র নয়, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কার্যকলাপে ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তকরণের ক্ষেত্রেও ড্রাইভিং লাইসেন্স একটি অপরিহার্য নথি।

তা ছাড়া, এর সঙ্গে চালকের কারিগরি দক্ষতার পাশাপাশি পথচারি এমনকি চালকের নিজেরও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িয়ে থাকে।

কিন্তু অনেকেই মনে করেন ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়। এজন্য বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে লাইসেন্স করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয়। তাই দালালের মাধ্যমে হয়রানির শিকার না হয়ে, নিজেই করে ফেলতে পারেন ড্রাইভিং লাইসেন্স। চলুন জেনে নেওয়া যাক এর পদ্ধতি—

ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য নূন্যতম যোগ্যতা-

আবেদনকারীকে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাশ হতে হবে। অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে নূন্যতম এসএসসি পাশ দেখাতে হয়।

যেকোনো ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রথম ও আবশ্যকীয় ধাপ হলো লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ।

অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বয়স কমপক্ষে ২০ বছর।

পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ৩টি ধরন আছে-

১. হালকা মোটরযানের (ওজন ২৫০০ কেজির নিচে) জন্য প্রার্থীর নূন্যতম বয়স ২০ বছর।

২. মধ্যম মোটরযানের (ওজন ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজি) জন্য কমপক্ষে ২৩ বছর তবে এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর কমপক্ষে ৩ বছর ব্যবহৃত হালকা মোটরযান ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে।

৩. ভারী মোটরযানের (ওজন ৬৫০০ কেজির বেশি) জন্য নূন্যতম বয়স ২৬ বছর এবং এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর কমপক্ষে ৩ বছরের মধ্যম মোটরযানের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে।

অনলাইনে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

১. আবেদনকারীর ছবি (সর্বোচ্চ ১৫০ কে.বি)।

২. রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক মেডিকেল সার্টিফিকেট (সর্বোচ্চ ৬০০ কে.বি),

৩. জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)।

৪. ইউটিলিটি বিলের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি), (আবেদনকারীর বর্তমান ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা যদি ভিন্ন হয় তবে বর্তমান ঠিকানার ইউটিলিটি বিল সংযুক্ত করতে হবে)।

৫. শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০কে.বি)।

৬. একজন গ্রাহক-ব্যবহারকারী ১টি মাত্র ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবে।

৭. গ্রাহকের বর্তমান ঠিকানায় উল্লিখিত থানার উপর ভিত্তি করে ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনটি সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ সার্কেল অফিসের আওতাধীন হবে।

৮. গ্রাহক অনলাইনে আবেদনের বাংলা ও ইংরেজীতে নির্ভুল তথ্য যথাযথভাবে পূরন করতে হবে।

৯. অনলাইনে আবেদন দাখিলের সময় ভুয়া তথ্য প্রদান করা হলে তার স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্মার্টকার্ডের আবেদনের জন্য

এখানেও একই কাগজপত্র লাগবে। ব্যতিক্রম শুধু লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বরটি সংযোজন করতে হবে, যেটা দেয়া হবে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা পাশের পর।

লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন

প্রথমেই বিআরটিএ সেবা বাতায়নে (লিংক) গিয়ে এনআইডি দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। এনআইডি’র অনুরূপ তথ্যগুলো দিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। পরীক্ষার স্থান নির্বাচন করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরীক্ষার তারিখ ও সময় নির্ধারিত হবে।

লাইসেন্স ফি জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয়ে যাবে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং এটিই ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার সময় ব্যবহার করা যাবে।

স্মার্টকার্ডের জন্য আবেদন

স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেয়া পরীক্ষার তারিখে নির্বাচিত স্থানে গিয়ে প্রার্থী ছবি, ডিজিটাল স্বাক্ষর ও আঙুলের ছাপ দিতে পারবেন। এই বায়োম্যাট্রিক পদ্ধতিটি সম্পন্ন হওয়ার পর প্রার্থীকে এসএমএস’র মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। এরপর ওইদিনই লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেস্ট অনুষ্ঠিত হবে। এই পরীক্ষাগুলোয় পাস করলে লার্নার বা শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি দিয়ে স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করা যাবে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য প্রয়োজনীয় ফি

মোটরসাইকেলের জন্য ২৩০ টাকা।
হালকা মোটরযানের জন্য করলে ৫১৮ টাকা।

স্মার্টকার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি

৫ বছরের নবায়ন ফিসহ পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ২,৪৮৭ টাকা।
১০ বছরের নবায়ন ফিসহ অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি ৪,২১২ টাকা।

উল্লেখ্য, সবার নিরাপত্তার স্বার্থে গাড়ি চালনায় কারিগরি দক্ষতা জরুরি বিষয়। গণযোগাযোগ পরিবহনগুলোয় যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তা নির্ভর করে চালকের উপর। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে শুধু গাড়ি চালানোই নয়, গাড়িটির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে তবেই গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামা উচিত। একটু অসাবধানতায় দুর্ঘটনার মাশুল সারা জীবন দিতে হয়। তাই সঠিকভাবে গাড়ি চালানো শিখে ড্রাইভি লাইসেন্স নেয়া ও নিরাপদে গাড়ি চালানো উচিত।

স্বাআলো/এসএস

.

Author
ঢাকা অফিস