
দেশের ৪৩ জেলার ৩৯টিতেই রেললাইনে সমস্যা। রেলের মান নষ্ট হওয়া, লাইনে পর্যাপ্ত পাথর না থাকা, মাটি সরে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে দেশের প্রায় অর্ধেক রেললাইন ঝুঁকিতে। সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের করা এক সমীক্ষায় এই চিত্র উঠে এসেছে।
গত ২৭ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দাড়িয়াপুর এলাকায় মালবাহী ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে লাইন ৫০০ মিটার বেঁকে যায়। ২৮ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় মালবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। ২৯ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবারো রেললাইন বেঁকে যায়।এতে মেরামতের আগ পর্যন্ত ওই দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।
দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত রেললাইনে সমস্যার কারণে বেশি দুর্ঘটনা হয়। সঙ্গে অনেক সময় সাংকেতিক জটিলতা এবং মানুষের ভুলও দায়ী। দেশের বেশির ভাগ রেললাইনের অবস্থাই ভালো নয়।
মাটি থাকছে না, পাথর নেই, লাইন পুরনো হয়ে যাওয়া এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ট্রেন দুর্ঘটনা বাড়ছে।
রেলের মান ও লাইনের অবস্থা যাচাই করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে করা ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে, সারা দেশে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার রেললাইন ও রেলপথের অবস্থা খারাপ।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামছুল হক বলেন, মূলত রেললাইনের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এমন দুর্ঘটনা হচ্ছে। আমাদের রেললাইনগুলোর অবস্থা ভালো নয়। নিয়মিত দেখভাল করা হলে এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
দেশের রেলপথ কতো: বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিসংখ্যান দফতরের তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশের ৪৩ জেলা রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত। রেলের কার্য ব্যবস্থাপনা পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে বিভক্ত। সারাদেশে এখন রেলপথ আছে তিন হাজার ৯৩.৩৮ কিলোমিটার। আর রেললাইন আছে চার হাজার ৪৩৮.৪০ কিলোমিটার।
কোথায় কোথায় সমস্যা: রেলের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পূর্বাঞ্চলের ১৬ জেলায় সমস্যা বেশি। এই অংশে ১৫০ কিলোমিটার রেললাইন পুরোপুরি নতুন করে করতে হবে। ৪০০ কিলোমিটার পথে রেল পরিবর্তন করতে হবে। প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথে স্লিপারসহ অন্য সরঞ্জাম পরিবর্তন করতে হবে। পূর্বাঞ্চলের রেলপথে পাঁচ লাখ কিউবিক মিটার পাথরের ঘাটতি আছে।
আসছে নতুন দুই প্রকল্প: রেলপথ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের জন্য আলাদা দুটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের রেলপথ পুনর্বাসন ও বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প নামের দুই প্রকল্প চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে ডিপিপিতে বলা হচ্ছে, দুর্ঘটনা হ্রাস, যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি, পণ্য পরিবহন বাড়ানো এবং রেলওয়ের রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রকল্প দুটি নেয়া হচ্ছে। ২০২৫ সালের ৩০ জুনের মধ্যে পূর্বাঞ্চলের প্রকল্পের কাজ শেষ করতে চায় রেল। আর ২০২৭ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করতে চায় পশ্চিমাঞ্চলের কাজ।
স্বাআলো/এস
.
ঢাকা অফিস
