
চরম গরম মসলার বাজার। দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে রান্নায় অতি ব্যবহৃত মশলা জিরা। ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে আদা। দামে আগুন রসুনের। সপ্তাহ তিনেক ধরে ঝাঁজ বেড়েছে পেঁয়াজের। বাজারে পণ্য সংকট বলছেন ব্যবসায়ীরা।
ভোক্তারা বলছেন, ইচ্ছে মতো দাম বাড়ালেও খাওয়া কমিয়ে দেয়া ছাড়া কিছু করার থাকে না তাদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতি মুনাফার লোভে কিছু আসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে এভাবে একটার পর একটা জিনিসের দাম বেড়েই চলছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একমাস আগেও বাজারে চায়না থেকে আমদানী করা আদা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকায়। চায়না আদা বাদেও বার্মিজ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা আদার দামও বেড়েছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা। আর দেশি আদার দাম কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকার বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে উৎপাদন কম হওয়ায় আদার দাম বেড়েছে।
এদিকে রান্নায় বহুল ব্যবহৃত মশলা জিরার দামে দিশেহারা ক্রেতারা। এক মাসের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে জিরার দাম। মাস দুয়েক আগেও ৪০০-৫০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, দাম বেড়ে যাওয়া জিরা বিক্রিও কমেছে অনেক। আগে যারা আড়াইশ গ্রাম জিরা কিনত এখন তারা কিনছে একশ গ্রাম।
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বাজারে যত ধরনের জিরা বিক্রি হয় তা প্রায় সবটিই আমদানি করা। আগের থেকে চাহিদা বেড়েছে। ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানিতে খরচ বাড়ছে। সম্প্রতি ভারত থেকে জিরা আমদানি কমে যাওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। এতে খুচরা পর্যায়ে জিরার দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও মসলার আমদানিকারক এনায়েত উল্লাহ বলেন, আগে অধিকাংশ জিরা আসত ভারত থেকে। হঠাৎ করে ভারতে জিরার দাম বাড়ার কারণে বেশি দামে কিনতে হয়েছে। এবার শুধু ভারত নয় আরো বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সিরিয়া থেকে ও আফগানিস্তান থেকে অফার আসতেছে। আবার তুরষ্ক থেকেও আমদানি করার চিন্তা করা হচ্ছে। আশা করছি খুব শিগগিরই দাম কমে যাবে। ঈদের আগেই কমতে পারে।
শুধু জিরার দামই নয়। দাম বেড়েছে অন্যান্য গরম মশলারও। বাজারে প্রতি কেজি গোল মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা কেজি দরে, লং বিক্রি হচ্ছে ১৪০০-১৫০০ টাকা কেজি। অর্থাৎ প্রতি একশ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। এলাচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি একশ গ্রাম ১৮০-২০০ টাকায়। যার প্রত্যেকটির দাম আগের থেকে প্রতি একশ গ্রামে ১০-২০ টাকা বেড়েছে।
অপরদিকে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে রসুন-পেঁয়াজের দাম। বাজারে এখন প্রতি কেজি দেশী রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকায়। আর আমদানি করা মোটা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকায়। দোকানদাররা বলছেন বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। তবে রসুন পরিমাণে কিছুটা কম লাগার কারণে এর খুব একটা প্রভাব না পড়লেও পেঁয়াজের ঝাঁঝে চোখে পানি ক্রেতাদের। ঈদুল ফিতরের আগে ৩০-৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহ তিনেকে না যেতেই দ্বিগুণ দাম রান্নায় অপরিহার্য এই পণ্যটির।
অধিক মুনাফা লাভের আশায় অনেকে পেঁয়াজ মজুদ রেখে সংকট তৈরি করছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সম্প্রতি সংবাদিকদের তিনি বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কয়েকদিনের ব্যবধানে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান বাজার বিবেচনায় আমরা পেঁয়াজ আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয় অবহিত করেছি। ইমপোর্ট পারমিট বা আইপি যেহেতু কৃষি মন্ত্রণালয় দিয়ে থাকে তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। দেশের কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য পান সেজন্য মূলত ইমপোর্ট পারমিট বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন যেহেতু ভোক্তাদের বাজারে পেঁয়াজ কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাই আমদানি করা ছাড়া উপায় নেই।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। ঠিকমতো বাজার তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা যে যার খুশি মতো চলছে। ভুগতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
এ বিষয়ে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস চেয়ারম্যান এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বাজারে সরকারের কোনো তদারকি নাই। যার ফলে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাত সামনে নিয়ে আসে তাদের মতো করে দাম বাড়াচ্ছে। অতি মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ীর কারণে বাজারটা আজ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বাজারে কোনো পণ্যের সংকট নাই। পর্যপ্ত মজুত আছে। সব কিছুরই সরবরাহ ব্যাপক রয়েছে। একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। আর সরকার অসাধু ব্যবসায়ীদের উপর দায় দিয়ে নিরব দশকের ভূমিকা পালন করছে। যারা দাম বাড়াচ্ছে তাদেরকে তো জিজ্ঞেস করা হচ্ছে না যে কেন দাম বড়তেছে। আমি বলবো এটা সরকারের অবহেলার কারণে বাজারের আজকে এই পরিস্থিতি। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।
স্বাআলো/এসএস
.
ঢাকা অফিস
